টাস্কফোর্স কি
টাস্কফোর্স (Task Force) হলো একটি বিশেষ দল বা কমিটি। যা নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা সমস্যা সমাধানের জন্য গঠিত হয়। এটি সাধারণত অস্থায়ীভাবে গঠিত হয়।এবং নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্য পূরণ করাই এর প্রধান লক্ষ্য। এটি সাধারণত সামরিক, প্রশাসনিক, আইন-শৃঙ্খলা বা ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত হয়।
টাস্কফোর্সের বৈশিষ্ট্য?
১. নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য
সাধারণত কোনো জটিল সমস্যা সমাধান, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা বা বিশেষ কোনো কার্যক্রম পরিচালনার জন্য টাস্কফোর্স গঠিত হয়।
২. বহু শাখার সমন্বয়
এটি বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত হতে পারে।
৩. অস্থায়ী কাঠামো
এটি সাধারণত স্থায়ী নয়। নির্দিষ্ট কাজ শেষ হলে এটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ অনলাইন টাইপিং জব ডেইলি পেমেন্ট
৪. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ
টাস্কফোর্স দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
৫. প্রশাসনিক ও সামরিক ব্যবহারে প্রচলিত
এটি প্রশাসন, নিরাপত্তা, সামরিক বাহিনী, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণঃ
বাংলাদেশে টাস্কফোর্স
দুর্নীতি দমন, মাদকবিরোধী অভিযান, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল।
সামরিক টাস্কফোর্স
বিশেষ অভিযান বা যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণের জন্য গঠন করা হয়।
কর্পোরেট টাস্কফোর্স
কোম্পানির সমস্যা সমাধান বা বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গঠন করা হয়।
আন্তর্জাতিক টাস্কফোর্স
জাতিসংঘ বা ন্যাটো বিভিন্ন সময়ে শান্তি রক্ষা বা মানবিক সহায়তার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করে।
স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স কবে গঠিত হয়?
বাংলাদেশ সরকার ২০২২ সালের ২১ আগস্ট ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠন করে। এই টাস্কফোর্সের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
টাস্কফোর্সের সদস্যদের মধ্যে পাঁচজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিবসহ সাতজন সচিব অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। টাস্কফোর্সের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী ও উন্নত দেশে পরিণত করা। এই উদ্যোগের চারটি স্তম্ভ হলো স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট অর্থনীতি।
আরও পড়ুনঃ গেম খেলে ডলার ইনকাম
স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটি’ কতজন সদস্য বিশিষ্ট?
স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটি ২৩ সদস্য বিশিষ্ট। এই কমিটির সভাপতি হলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিবকে সদস্য সচিব হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
টাস্কফোর্স কমিটির কাজ কি?
টাস্কফোর্স কমিটির কাজ মূলত নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা সমস্যার সমাধানের জন্য দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এটি সাময়িকভাবে গঠিত হয় এবং কাজ সম্পন্ন হলে বিলুপ্ত হতে পারে বা নতুনভাবে পুনর্গঠিত হতে পারে। নিচে টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান কাজগুলো দেওয়া হলোঃ
১. সমস্যা বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন
- নির্দিষ্ট সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা।
- তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা।
২. পরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণ
- সমস্যার সমাধানে কার্যকর কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।
- স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নির্ধারণ করা।
৩. সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়
- বিভিন্ন দপ্তর, মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিদের মধ্যে সমন্বয় করা।
- কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও জনবল সংগঠিত করা।
৪. কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়ন
- নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা।
- সংকট মোকাবিলায় জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
৫. নিয়মিত তদারকি ও অগ্রগতি পর্যালোচনা
- কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা এবং প্রতিবেদন প্রস্তুত করা।
- প্রয়োজনে নতুন সিদ্ধান্ত বা কৌশল গ্রহণ করা।
৬. নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ প্রদান
- সরকার বা উচ্চপর্যায়ের কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা।
- প্রণীত নীতিমালার কার্যকারিতা যাচাই করা ও পরিমার্জন করা।
আরও পড়ুনঃ টাকা ইনকাম করার সহজ উপায় বাংলাদেশে
উদাহরণ
করোনা টাস্কফোর্স
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন বিতরণ, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছে।
অর্থনৈতিক টাস্কফোর্স
দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
মাদকবিরোধী টাস্কফোর্স
অবৈধ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও চোরাচালান প্রতিরোধে কাজ করে।
সুতরাং টাস্কফোর্স কমিটি নির্দিষ্ট সমস্যা চিহ্নিত করে, পরিকল্পনা তৈরি করে, বাস্তবায়ন করে এবং অগ্রগতি তদারকি করে। এটি দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করে।
শেষ কথা
টাস্কফোর্স হলো একটি বিশেষায়িত দল, যা নির্দিষ্ট কাজ দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য গঠিত হয়।