পড়াশোনা

ডিভোর্স পেপার লেখার নিয়ম | ডিভোর্স দিতে কি লাগে

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আমরা সকলেই ডিভোর্স সম্পর্কে জানি। আমাদের দেশে হাজারও দম্পতির ডিভোর্স হয়ে থাকে।ডিভোর্স পেপার লেখার নিয়মএই ডিভোর্স করতে গেলে পেপারের অনেক নিয়ম থাকে। এই পেপারের নিয়ম সম্পর্কে আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করবো। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ

ডিভোর্স পেপার লেখার নিয়ম?

বাংলাদেশে আগের তুলনায় বর্তমান সময়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ডিভোর্সের পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাদের একে অপরের সাথে থাকাটাই এখন বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। যেজন্য ডিভোর্সের পরিমাণ এতো বেড়ে গেছে।

যে জন্য তারা উকিল বা কাজীর দ্বারা ডিভোর্স করাচ্ছে। কিন্তু ডিভোর্স দিতে হলে অনেক নিয়মকানুনের মাধ্যমে দিতে হবে এবং এটি সময়ের ব্যাপার। আর এই ডিভোর্স করতে হলে অনেক প্রোসেস মেনে চলতে হয়। ডিভোর্সের কয়েকটি প্রসেস আছেঃ

  • স্বামী ডিভোর্স দিতে পারবে
  • স্ত্রী ডিভোর্স দিতে পারবে
  • খোলা তালাক দেওয়া যায়

যদি কোনো স্বামী স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চায় তাহলে স্বামীকে ডিভোর্সের পেপার পূরণ করতে হবে।আর যদি স্ত্রী স্বামীকে ডিভোর্স দিতে চায় তাহলে স্ত্রীর ডিভোর্স পেপার পূরণ করতে হবে। আর খোলা তালাক দিতে গেলে দুই জনের মিলে পেপার পূরণ করতে হবে।

বিয়ে করার জন্য যেমন সরকারি ভাবে রেজিস্ট্রি করতে হয়। তেমনি স্বামী বা স্ত্রী ডিভোর্স দেওয়ার সময় উকিল বা কাজীর প্রয়োজন হয়। যদি কেউ ডিভোর্স দিতে চায় হবে তাকে মুখে স্বীকারের পর তাকে কাগজের মাধ্যমে স্বীকার দিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ টাকা ইনকাম সাইট

কারণ ডিভোর্স মুখে বললেও কাগজপত্রেও উল্লেখ করে লিখতে হয়। এই ডিভোর্স পেপার আবার নোটিশ অনুযায়ী প্রেরণ করতে হয়। এরপর এই ডিভোর্স পেপার আবার ডাকযোগে অথবা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে অপর পক্ষকে পাঠাতে হয়। নিচে ডিভোর্স পেপার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

সর্বপ্রথম কাগজের দেওয়া ফরমটি পূরণ করতে হবে এবং বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে। কি উদ্দেশ্যে ছাড়া হচ্ছে সেই বিষয়টি ভালো ভাবে পেপারে উল্লেখ করে দিতে হবে। দেনা পাওনার কোন বিষয় থাকলে সেইটা উল্লেখ করে দিতে হবে এবং পারিবারিক যদি কোন সালিশ থাকে তাহলে সে বিষয়টি ও উল্লেখ করে দিতে হবে।

ডিভোর্স করার সময় প্রথমে উকিল অথবা কাজী একটা ফরম দিবে এই ফরমটি পূরণ করতে হবে। ফরমে কারণ উল্লেখ করতে হবে, যে কি কারণে ডিভোর্স দিবে। সকল প্রকার কারণসমূহ ডিভোর্স পেপারে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া বাবা, মা এবং জেলার নাম দিতে হবে।

এছাড়া আরও কিছু কাগজপত্র লাগবে। যে কাগজপত্র ডিভোর্সের জন্য অনেক প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পৌরসভার চেয়ারম্যান অথবা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রসাশক বা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার নিয়োগ করা কোন ব্যক্তির এদের দ্বারা কোন সালিশ নামা দেখাতে হবে।

যেটা এলাকার চেয়ারম্যান এর স্বাক্ষর দ্বারা সত্যায়িত করতে হয়। ফরমের সকল কিছু পূরণ এর পর সকল সমস্যার কথা ফরমে উল্লেখ করে সরকারি দায়িত্ববান ব্যক্তির সিগনেচার নিয়ে নিজেদের পৌরসভার চেয়ারম্যান অথবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের হাতে নোটিশটি পাঠিয়ে দিতে হবে।

এবং সেই নোটিশ অপরপক্ষকে ৩০ দিনের মধ্যেই চেয়ারম্যান পাঠিয়ে দিবে স্বামী/স্ত্রী কাছে। তারপরে ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণ মিলনের উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যানের সালিশ তৈরি করবে। এরপরেও যদি দুপক্ষের কোন মিল করা সম্ভব না হয়।

তাহলে ডিভোর্স পেপারটি প্রধানের ৯০ দিনের মধ্যেই কার্যকর হয়ে যাবে। এ ৯০ দিনের মধ্যে যাবতীয় খরচ স্বামীকে দিতে হবে। এই কাজটি একদম বাধ্যতামূলক ভাবে বলা আছে। তারপরে সেটি বিয়ে রেজিস্ট্রি কাজী এর মাধ্যমে ডিভোর্স নিতে হবে।

সবশেষে স্বামী এবং স্ত্রীর সিগনেচার রেজিস্ট্রি অফিসে ডিভোর্স পেপার জমা দিতে হবে। এছাড়া আরও অনেক নিয়ম আছে ডিভোর্সের জন্য মুসলিম আইন দ্বারা বলা আছে স্ত্রী নিজ ক্ষমতায় কখনোই ডিভোর্স দিতে পারবে না।

এরপরেও যদি স্বামী স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার ক্ষমতা বিয়ের সময় স্ত্রীকে দিয়ে থাকে তাহলে স্ত্রী ডিভোর্স দিতে পারবে। মুসলিম আইন অনুযায়ী সালিশ অথবা সমঝোতার মাধ্যমে ছেলেপক্ষ হতে ডিভোর্স দিয়ে থাকে।যাকে বলা হয় খোলা তালাক।

আরও পড়ুনঃ রেফার করে টাকা ইনকাম পেমেন্ট বিকাশে

বিদেশ থেকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম?

বিদেশ থেকে ডিভোর্স দেওয়া একটু কঠিন প্রক্রিয়া এরপরেও যদি সম্ভব হয় তাহলে দেশে এসে ডিভোর্স দেওয়া সব থেকে ভালো। কারণ বাংলাদেশের নীতি অনুযায়ী কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। যে নিয়মকানুন মেনে ডিভোর্স করাতে হবে।

এরপরেও যদি সম্ভব না হয় তাহলে কিছু মাধ্যমের দ্বারা বিদেশ থেকে তালাক দিতে পারবে। বিদেশ থেকে তালাক দিতে হলে দেশের ভালো একজন আইনজীবীর মাধ্যমে কাজটি করতে হবে। একজন অভিভাবক লাগবে এবং নিকটস্ত কেউ যার মাধ্যমে সংসারের যাবতীয় দেখাশুনা করবে এমন ব্যক্তি।

যে সম্পদ অথবা যাবতীয় দায়িত্ব রাখে এমন একজন ব্যক্তি লাগবে। আইনজীবীর মাধ্যমে ডিভোর্সের কারণ উল্লেখ করতে হবে এবং নোটিশ তৈরি করতে হবে। সেই নোটিশটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে যে অবস্থানে থাকে সেখানে পাঠাতে হবে।

নিজস্ব স্বাক্ষর করা লাগবে এবং সেটা আবার পুনরায় আইনজীবীর কাছে প্রেরণ করতে হবে। সেটি আইনজীবী সম্পন্ন করার পরে উপজেলা চেয়ারম্যান অথবা কাউন্সিল পর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

অপরপক্ষকে সেই নোটিশ দিয়ে দেয়া হবে। তারপরে কার্যক্রমগুলো যে ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে অভিভাবক সেই কাজ চালিয়ে নিতে পারবে। প্রয়োজনে অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারবে।

কাজী অফিসে ডিভোর্সের নিয়ম?

ডিভোর্সের যেখান থেকে ইচ্ছা সেখান থেকে দিতে পারবে নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। ভালো কোনো আইনজীবী ধরে বাংলাদেশের যেকোন জায়গা থেকে ডিভোর্স দিতে পারা যাবে। সাধারণত যার দ্বারা বিয়ে করানো হয়েছে তার মাধ্যমে ডিভোর্স দিয়ে থাকে।

এইটার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। যেকোন আইনজীবীর দ্বারা ডিভোর্স করানো যাবে। কাজী অফিসের মাধ্যমে ডিভোর্স এবং বিবাহের টাকা জমি সম্পাদনা করা হয়ে থাকে। এই জন্য বাংলাদেশের যে কোন কাজী অফিসে ডিভোর্স করানো যাবে।

এক্ষেত্রে ছেলে মেয়েকে ডিভোর্স দিতে পারবে এবং মেয়ে ছেলেকে ডিভোর্স দিতে পারবে।তবে যেই ডিভোর্স দিক না কেন তাকে লিখিত দিয়ে ডিভোর্স দিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ এড দেখে টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট

ডিভোর্সের দেনমহরের নিয়ম?

ডিভোর্সের আরও কিছু নিয়ম রয়েছে যেমন দেনমোহরের ব্যপারটা।ডিভোর্সের আগে স্বামীকে অবশ্যই পুরো দেনমোহর পরিশোধ করতে হয়। যদি সে বিবাহের সময় পুরো দেনমোহর না দিয়ে থাকে,তাহলে স্ত্রীকে দেনমোহর দিতে হবে।

কারণ স্ত্রীর এইটা অধিকার। ডিভোর্স কার্যকর হয়ার পর তাদের রেজিস্ট্রারের নিকট ডিভোর্স সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে হবে এবং তা সংগ্রহ করতে হবে।

এইদিকে স্ত্রী কয়েকটি নির্ধারিত কারণে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে পারবে যা ডিভোর্স আইন, ১৮৬৯ এর ধারা ২ জারি রয়েছেঃ

  • স্বামী যদি চার বছর নিরুদ্ধেশ থাকে।
  • স্বামী যদি দুই বছর ভরণপোষণ না দেয়।
  • স্বামী যদি আইনের লঙ্ঘন করে দ্বিতীয় বিয়ে করে।
  • স্বামী যদি যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া তিন বছর বৈবাহিক দায়িত্ব পালন না করে।
  • স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী অত্যাচার করে।

কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম?

কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স দিতে হলে বাংলাদেশের হাইকোর্ট থেকে ১৯৬১ সালের আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতা না হলে ৩০ দিনের তিন দফায় কোর্টে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠাতে হয়।

কাজী বা রেজিস্ট্রি অফিসের অনুমতি নিয়ে ডিভোর্সের জন্য বৈধ কারণ দেখাতে হবে। কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স দিতে চাইলে অবশই সব নিয়ম মেনে এবং কোন নতুন নিয়ম যুক্ত হয় তাহলে সেই নিয়ম সহ মেনে নিতে হবে।

কারণ যেকোন সময় নিয়ম পরিবর্তন হতে পারে। আর যেহেতু বর্তমানে বাংলাদেশে বিচ্ছেদের পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাই কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স দেওয়ার সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে।

কারণ এখন খুব সহজেই কাজী অফিসের মাধ্যমে ডিভোর্স করানো যায়। কিন্তু যে মাধ্যমেই ডিভোর্স করা হোক না কেন ডিভোর্স পেপারের নিয়ম সঠিক থাকতে হবে। পেপারের নিয়ম মেনে তারপর ডিভোর্স করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশী অ্যাপ প্রতিদিন 1000 টাকা আয় পেমেন্ট বিকাশ

শেষ কথা

আশা করি আজকের পোস্টে যারা পড়েছেন তারা ডিভোর্স পেপার লেখার নিয়ম সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও যদি এই বিষয় সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button