শবে বরাত ২০২৫ কত তারিখে
২০২৫ সালে শবে বরাত পালিত হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) দিবাগত রাতে। ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এটি শাবান মাসের ১৫তম রাত। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে তারিখ একদিন কমবেশি হতে পারে।শবে বরাত (লাইলাতুল বরাত) হলো শাবান মাসের ১৫তম রাত, যা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলায় একে “ভাগ্য রজনী” বা “মুক্তির রাত” বলা হয়।
শবে বরাতের অর্থ কি?
শব ফারসি শব্দ, যার অর্থ রাত। বরাত অর্থ মুক্তি, নাজাত বা ভাগ্য। অর্থাৎ, শবে বরাত মানে হলো “মুক্তির রাত” বা “রহমতের রাত”।
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত?
শবে বরাতকে লাইলাতুল বরাত (রহমতের রাত) বলা হয়। অনেক হাদিসে বলা হয়েছে, এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন এবং বহু গুনাহ মাফ করেন। তবে কিছু হাদিসের বিশুদ্ধতা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছেঃ
১. আল্লাহ তাআলা ক্ষমার দরজা খুলে দেন
হাদিসে এসেছেঃ “আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।” (তিরমিজি: ৭৩৯, ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)।
২. দোয়া কবুলের বিশেষ সুযোগ
একটি হাদিসে বলা হয়েছেঃ “শাবান মাসের ১৫তম রাতে তোমরা ইবাদতে মশগুল হও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। কারণ, আল্লাহ তাআলা সূর্যাস্তের পর থেকে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেনঃ
‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিজিক প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দেব। কোনো বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি তাকে মুক্তি দেব।’ এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা চলতে থাকে।” (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪, বাইহাকি: ৩৫৪৮)।
শবে বরাতে করণীয় ইবাদত?
শবে বরাতে কোনো নির্দিষ্ট ইবাদত বা নামাজের বিধান নেই, তবে সাধারণ নফল ইবাদত করা যেতে পারেঃ
তাহাজ্জুদ নামাজ
বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া উত্তম।
কুরআন তিলাওয়াত
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য কুরআন পড়া ভালো।
জিকির ও দোয়া
গুনাহ মাফ, রহমত, হেদায়াত ও দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণ কামনা করা উচিত।
রোজা রাখা
১৫ শাবানের দিন নফল রোজা রাখা সুন্নাহ বলে বিবেচিত হয়।
শবে বরাত নিয়ে বিতর্ক ও সতর্কতা?
শবে বরাতের বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে কিছু হাদিস পাওয়া যায়, তবে তা নিয়ে উলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তাইঃ
- শবে বরাতকে ধর্মীয়ভাবে বাধ্যতামূলক মনে করা যাবে না।
- নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাত নামাজ বা বিশেষ কোনো দোয়া পড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে প্রমাণিত নয়।
- মসজিদে আলাদাভাবে শবে বরাত উদযাপন করা বিদআত হতে পারে।
- আতশবাজি, আনন্দ উদযাপন বা কবরস্থান ভ্রমণকে বিশেষ আমল হিসেবে পালন করা শরিয়তসম্মত নয়।
শেষ কথা
শবে বরাত পালন করা বিদআত কি না, তা নির্ভর করে কিভাবে পালন করা হচ্ছে তার ওপর। যদি কেউ সাধারণভাবে নফল ইবাদত, দোয়া ও তওবা করে, তাহলে তা বিদআত নয়।
কিন্তু যদি কেউ এটাকে বিশেষভাবে উদযাপন করে, নির্দিষ্ট নামাজ, মিলাদ বা বিশেষ রীতি তৈরি করে, তাহলে তা বিদআত হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন!