শবে বরাত নামাজ কিভাবে পড়তে হয়
শবে বরাত (لَيْلَةُ ٱلْبَرَاءَة) ইসলামিক ক্যালেন্ডারের শাবান মাসের ১৫তম রাত। অনেক মুসলমান বিশ্বাস করেন যে, এই রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দয়া ও ক্ষমা প্রদর্শন করেন। এই রাতে ইবাদত-বন্দেগির বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।তবে শবে বরাত উপলক্ষে নির্দিষ্ট কোনো নামাজের বিধান নেই। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আসকার ও দোয়া করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
শবে বরাতের নামাজের বিধান ও ফজিলত?
শবে বরাতের নামাজ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে কোনো নির্দিষ্ট আমল বা নামাজের কথা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে কিছু হাদিসে এই রাতের গুরুত্ব ও আল্লাহর ক্ষমার কথা বলা হয়েছে।
হাদিসে শবে বরাতের ফজিলত?
১. আল্লাহ বান্দাদের ক্ষমা করেন
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।” (ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, তিরমিজি: ৭৩৯, সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)।
২. দোয়া কবুলের রাত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেনঃ “শাবান মাসের ১৫তম রাতে তোমরা ইবাদতে মশগুল হও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। কারণ, এ রাতে আল্লাহ বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত নাজিল করেন এবং দোয়া কবুল করেন।” (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪, বাইহাকি: ৩৫৪৮)।
শবে বরাতের নামাজ পড়ার নিয়ম?
১. নফল নামাজ (২ রাকাত করে পড়া উত্তম)
শবে বরাতের রাতে নফল নামাজ পড়া সুন্নত। আপনি ২, ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ বা ১৪ রাকাত পর্যন্ত নফল নামাজ পড়তে পারেন।
নিয়মঃ
১. নিয়ত করুন
“আমি ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ছি কিবলামুখী হয়ে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আল্লাহু আকবার।”
২. প্রথম রাকাত
- সুরা ফাতিহা পড়ুন।
- এরপর যেকোনো সুরা (যেমনঃ সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস ইত্যাদি) পড়ুন।
- রুকু, সেজদা সম্পন্ন করে দ্বিতীয় রাকাতে যান।
৩. দ্বিতীয় রাকাত
- সুরা ফাতিহা পড়ুন।
- এরপর যেকোনো সুরা পড়ুন।
- নামাজ শেষ করে সালাম ফেরান।
এভাবে ২ রাকাত করে যত ইচ্ছা নামাজ পড়তে পারেন।
২. তাহাজ্জুদ নামাজ
তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের সেরা ইবাদত। শবে বরাতের রাতে এই নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
নিয়মঃ
- সাধারণত ২ থেকে ৮ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়।
- এটি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম।
- নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন এবং ইস্তিগফার পড়ুন।
৩. সালাতুল তওবা (তওবার নামাজ)
শবে বরাতের মূল বিষয় হলো গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়া। তাই ২ বা ৪ রাকাত সালাতুল তওবা পড়া যেতে পারে।
নিয়মঃ
১. নিয়ত করুন “আমি তওবার জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ছি, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আল্লাহু আকবার।”
২. প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহা + যেকোনো সুরা পড়ুন।
৩. নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহ মাফের জন্য কাঁদো কাঁদো মনে দোয়া করুন।
৪. সালাতুল হাজত (প্রয়োজনের নামাজ)
শবে বরাতের রাতে কেউ চাইলে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনের জন্য সালাতুল হাজত নামাজ পড়তে পারেন।
নিয়মঃ
- ২ রাকাত বা ৪ রাকাত পড়া যায়।
- নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করুন।
শবে বরাতের অন্যান্য আমল?
- শুধু নামাজই নয়, এই রাতে আরও কিছু ভালো আমল করা যেতে পারে।
- কুরআন তিলাওয়াত করা।
- ইস্তিগফার (إستغفر الله) বেশি বেশি বলা।
- দরুদ শরিফ পাঠ করা।
- নিজের গুনাহের জন্য কাঁদো কাঁদো মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
- পরের দিন নফল রোজা রাখা।
শবে বরাত নামাজ নিয়ে ভুল ধারণা ও বিদআত?
কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যা ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিদআত হতে পারেঃ
- শবে বরাতের ৬ রাকাত নামাজ সুন্নত নয়।
- ১০০ রাকাত নামাজের বিশেষ বিধান নেই।
- দলবদ্ধ হয়ে শবে বরাত উদযাপন করার নিয়ম নেই।
- শবে বরাত উপলক্ষে আতশবাজি, হালুয়া-রুটি বিতরণ ইত্যাদি করা বিদআত।
সঠিক পদ্ধতি
একান্তভাবে ইবাদত করুন, নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, বিদআত থেকে দূরে থাকুন।
সংক্ষেপে করণীয়ঃ
- তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজ পড়ুন।
- দোয়া ও ইস্তিগফার করুন।
- কুরআন তিলাওয়াত করুন।
- পরের দিন নফল রোজা রাখুন।
শেষ কথা
শবে বরাত হলো রহমত ও মাগফিরাতের রাত। এই রাতে নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, তওবা, দোয়া ও কুরআন তিলাওয়াত করা উত্তম।
তবে, শরিয়তে নির্দিষ্ট কোনো নামাজের বিধান নেই, তাই মনগড়া নিয়ম পালন করা উচিত নয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন!