ইসলাম

শবে বরাত কি ভাগ্য রজনী

শবে বরাত ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত রাত, যা শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতে পালিত হয়। অনেক মুসলমান এই রাতকে “ভাগ্য রজনী” বলে অভিহিত করেন, কারণ বিশ্বাস করা হয় যে, এই রাতে মানুষের রিজিক, আয়ু ও ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়।শবে বরাত কি ভাগ্য রজনীতবে এ বিষয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে। কিছু আলেমের মতে, ভাগ্য নির্ধারণের চূড়ান্ত ফয়সালা হয় শবে কদরের রাতে। তবে নিঃসন্দেহে শবে বরাত হলো ক্ষমা, রহমত ও মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য দয়ার দরজা খুলে দেন।

এবং যারা আন্তরিকভাবে তওবা করে, তাদের গুনাহ ক্ষমা করেন। তাই শবে বরাতকে শুধু ভাগ্য রজনী হিসেবে নয়। বরং আত্মশুদ্ধি, ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি বিশেষ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।

শবে বরাত কি ভাগ্য রজনী?

হ্যাঁ, শবে বরাত কে ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী ভাগ্য রজনী বা ভাগ্য নির্ধারণের রাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই রাতটি ইসলামিক ক্যালেন্ডারের শাবান মাসের ১৫তম রাত (১৪ শাবান দিবাগত রাত) পালিত হয়। এই রাতকে লাইলাতুল বরাত (আরবিঃ ليلة البراءة) বলা হয়, যার অর্থ “মুক্তির রাত” বা “ভাগ্য নির্ধারণের রাত“।

আরও পড়ুনঃ শবে বরাত নামাজ কিভাবে পড়তে হয়

শবে বরাতকে ভাগ্য রজনী বলা হয় কেন?

ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, এই রাতে আল্লাহ তাআলা মানুষের ভবিষ্যৎ, রিজিক, মৃত্যু এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করেন। এই রাতে মানুষের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, এবং ভাগ্য সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগুলো লিপিবদ্ধ করা হয় বলে মনে করা হয়। এই কারণে এটিকে ভাগ্য রজনী বলা হয়।

শবে বরাতের গুরুত্ব?

১. ভাগ্য নির্ধারণ

বিশ্বাস করা হয় যে এই রাতে আল্লাহ তাআলা আগামী বছরের জন্য মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করেন।

২. ক্ষমা ও রহমতের রাত

এই রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের গুনাহ ক্ষমা করেন এবং রহমত বর্ষণ করেন।

৩. ইবাদত ও প্রার্থনার সুযোগ

মুসলিমরা এই রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া এবং তাওবা (ক্ষমা প্রার্থনা) করে থাকেন।

৪. মৃতদের জন্য দোয়া

এই রাতে মৃত আত্মীয়-স্বজনের জন্য দোয়া করারও প্রচলন রয়েছে।

শবে বরাতের আমল?

  • নফল নামাজ পড়া।
  • কুরআন তিলাওয়াত করা।
  • দোয়া ও ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা।
  • মৃতদের জন্য দোয়া করা।
  • গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা।

সতর্কতাঃ

শবে বরাত নিয়ে কিছু লোকাচার বা বিদআত (ধর্মে নতুন সংযোজন) প্রচলিত রয়েছে, যেমনঃ আতশবাজি করা বা বিশেষ খাবার বিতরণ করা। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, এগুলো অনুমোদিত নয়। শবে বরাতের মূল উদ্দেশ্য হলো ইবাদত, তাওবা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন।

আরও পড়ুনঃ শবে বরাত ২০২৫ কত তারিখে

সুতরাং, শবে বরাতকে ভাগ্য রজনী বলা হয় কারণ এই রাতে আল্লাহ তাআলা মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করেন এবং এটি মুসলিমদের জন্য একটি বিশেষ ইবাদত ও ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ।

শবে বরাত ও ভাগ্যের সম্পর্ক?

অনেক ইসলামি স্কলারদের মতে, শবে বরাতের রাতে মানুষের রিজিক, আয়ু ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। তবে এটি নিয়ে আলেমদের মাঝে ভিন্ন মত রয়েছে। কিছু আলেম বলেন, ভাগ্য নির্ধারণের আসল রাত হলো লাইলাতুল কদর (শবে কদর), কারণ কোরআনে বলা হয়েছেঃ

“আমি একে এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমরা সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করা হয়।” (সূরা আদ-দুখান: ৩-৪)।

অনেক আলেমের মতে, এই আয়াত শবে কদর সম্পর্কে বলা হয়েছে, শবে বরাত সম্পর্কে নয়।

শবে বরাত: ক্ষমা ও রহমতের রাত

অধিকাংশ হাদিস অনুযায়ী, শবে বরাত হলো ক্ষমা, রহমত ও মুক্তির রাত। হাদিসে এসেছেঃ

“যখন শাবান মাসের পনেরোতম রাত আসে, তখন আল্লাহ দুনিয়ার কাছের আসমানে নেমে আসেন এবং বলেনঃ‘আছে কি কেউ, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব? আছে কি কেউ, যে রিজিক চাইবে, আমি তাকে রিজিক দেব?’” (ইবনে মাজাহ, ১৩৮০)।

আরও পড়ুনঃ শবে বরাতের ফজিলত

শেষ কথা

শবে বরাতকে “ভাগ্য রজনী” বলা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। বরং এটি ক্ষমা ও রহমতের রাত। এই রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করেন, তবে ভাগ্য নির্ধারণের চূড়ান্ত বিষয়টি শবে কদরের রাতেই ঘটে। তাই শবে বরাতে আমাদের উচিত বেশি করে তওবা করা, ইবাদত করা এবং আল্লাহর রহমত কামনা করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button