শবে বরাত ২০২৫
শবে বরাত ইসলামের অন্যতম মহিমান্বিত রাত। এটি শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতে পালিত হয় এবং বিশ্বাস করা হয় যে, এই রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত দান করেন। মুসলমানদের জন্য শবে বরাত আত্মশুদ্ধি, ক্ষমা প্রার্থনা এবং ইবাদতের এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।২০২৫ সালের শবে বরাত কবে হবে, এর ফজিলত কী, কী আমল করা উচিত এবং কী ধরনের ভুল এড়িয়ে চলতে হবে এসব বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।
শবে বরাত কি?
শবে বরাত, যাকে “লাইলাতুল বরাত” বা “শবে বরাত” বলা হয়। এটি ইসলাম ধর্মে একটি বিশেষ রাত। এই রাতটি ইসলামিক ক্যালেন্ডারের শাবান মাসের ১৫তম রাতে পালিত হয়।
“শবে বরাত” শব্দটি ফারসি ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ “মুক্তির রাত” বা “ভাগ্য নির্ধারণের রাত”। আরবিতে এটি “লাইলাতুল বরাত” নামে পরিচিত, যার অর্থ “মুক্তির রাত“। এই রাতটি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র বলে বিবেচিত হয়।
আরও পড়ুনঃ শবে বরাত কি ভাগ্য রজনী
বিশ্বাস করা হয় যে এই রাতে আল্লাহ তাআলা মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করেন, পাপ ক্ষমা করেন এবং মানুষের প্রার্থনা কবুল করেন। অনেক মুসলিম এই রাতে নফল নামাজ পড়েন, কুরআন তিলাওয়াত করেন, দোয়া করেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
শবে বরাতের রাতে বিভিন্ন দেশে মুসলিমরা বিভিন্ন রীতি পালন করে থাকেন। যেমনঃ মসজিদে জমায়েত হয়ে ইবাদত করা, মৃত আত্মীয়-স্বজনের জন্য দোয়া করা এবং গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা। তবে এই রাতের গুরুত্ব ও পালন পদ্ধতি নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে।
শবে বরাতের অর্থ ও গুরুত্ব?
‘শবে বরাত’ শব্দটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি বা রহমত। আরবি ভাষায় একে ‘লাইলাতুল বরাহ’ বলা হয়, যার অর্থ হলো মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ বান্দাদের ক্ষমা করেন, রিজিক নির্ধারণ করেন এবং মৃত্যুর ফয়সালা করেন বলে বিশ্বাস করা হয়।
কোরআন ও হাদিসে শবে বরাতের উল্লেখঃ শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনে সরাসরি কিছু বলা হয়নি, তবে সূরা আদ-দুখান (৪৪:৩-৪) এ বলা হয়েছেঃ “নিশ্চয়ই আমি এটি (কোরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমরা সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করা হয়।”
অনেক আলেমের মতে, এই আয়াত লাইলাতুল কদরের রাতের বর্ণনা দেয়, তবে কিছু আলেম মনে করেন এটি শবে বরাতের প্রতিও ইঙ্গিত করে। হাদিসে এসেছেঃ
“যখন শাবান মাসের পঞ্চদশ রাত আসে, তখন আল্লাহ আসমান-দুনিয়ার দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮০)। এ কারণে শবে বরাতকে ক্ষমা, মুক্তি ও রহমতের রাত বলা হয়।
আরও পড়ুনঃ শবে বরাত নামাজ কিভাবে পড়তে হয়
শবে বরাতের ফজিলত ও বিশেষত্ব?
শবে বরাতের গুরুত্ব সম্পর্কে বহু হাদিস পাওয়া যায়। যেমনঃ
১. আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত
এই রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করেন এবং দোয়া কবুল করেন। তবে শর্ত হলোঃ বান্দা যদি আন্তরিকভাবে তওবা করে এবং অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ না করে।
২. রিজিক ও ভাগ্যের নির্ধারণ
হাদিস মতে, এই রাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ফয়সালা হয়। যেমনঃ মানুষের রিজিক, আয়ু ও অন্য অনেক বিষয়।
৩. কবরবাসীদের প্রতি দয়া
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) শবে বরাতে জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া করেছেন।
শবে বরাতে করণীয় আমল?
শবে বরাতের রাত ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির রাত। এ রাতে কী করা উচিত তা নিচে দেওয়া হলোঃ
১. নফল নামাজ আদায় করা
শবে বরাতে নফল নামাজ পড়ার ব্যাপারে বিশেষ কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। তবে দুই রাকাত করে যত ইচ্ছা নামাজ পড়া যায়।
২. কুরআন তিলাওয়াত করা
কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। বিশেষ করে সূরা ইয়াসিন, সূরা মুলক ও সূরা আল-ইখলাস পড়া ভালো।
৩. তওবা ও ইস্তিগফার করা
এই রাতে বেশি করে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়া উচিত এবং গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
৪. দোয়া করা
এই রাতে আল্লাহর কাছে নিজের জন্য, পরিবার ও মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এই দোয়াগুলো পড়া যেতে পারেঃ
“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্না।”
“রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।”
৫. রোজার নিয়ত করা
রাসুল (সা.) শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন, বিশেষ করে ১৫ শাবানের রোজা রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ শবে বরাত ২০২৫ কত তারিখে
শবে বরাতে কিছু ভুল ধারণা ও বিদআত?
অনেক মানুষ শবে বরাত সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে এবং কিছু বিদআতি কাজ করে, যা ইসলামে অনুমোদিত নয়। যেমনঃ
১. শবে বরাতের রাতে বিশেষ হালুয়া-রুটির আয়োজন করা
অনেক মানুষ মনে করে, শবে বরাতে বিশেষ হালুয়া-রুটি বানানো দরকার। এটি ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নয়, বরং এটি কেবলই একটি সাংস্কৃতিক প্রথা।
২. কবরবাসীদের রুহ ঘরে আসে ধারণা করা
অনেক মানুষ মনে করে, শবে বরাতের রাতে মৃতদের আত্মা পৃথিবীতে আসে। এটি ভিত্তিহীন বিশ্বাস এবং ইসলামে এ ধরনের কোনো ধারণার সমর্থন নেই।
৩. সমস্ত রাত জাগা বাধ্যতামূলক মনে করা
কেউ চাইলে রাতভর ইবাদত করতে পারে, তবে এটি ফরজ বা বাধ্যতামূলক নয়। যদি সম্ভব না হয়, তবে অন্তত কিছু সময় ইবাদত করাই যথেষ্ট।
৪. গণভাবে আতশবাজি বা আনন্দ উৎসব করা
শবে বরাতে অনেক জায়গায় আতশবাজি ফোটানো হয়, যা সম্পূর্ণরূপে ইসলামবিরোধী। এই রাতটি আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের জন্য নির্ধারিত, আনন্দ-উৎসবের জন্য নয়।
শবে বরাত ২০২৫ কবে?
শবে বরাত নির্ধারিত হয় চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে। হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এটি পালিত হয় শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতে। ২০২৫ সালে শবে বরাতের সম্ভাব্য তারিখ হবে ৫ মার্চ, বুধবার (১৪ শাবান, ১৪৪৬ হিজরি)। তবে চাঁদ দেখার ভিত্তিতে একদিন কমবেশি হতে পারে।
শেষ কথা
শবে বরাত এক মহিমান্বিত রাত। যা মুসলমানদের জন্য ক্ষমা, রহমত ও আত্মশুদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। এ রাতে বেশি করে ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও তওবা করা উচিত। তবে শবে বরাত সম্পর্কে বিদআত ও ভুল বিশ্বাস থেকে বিরত থাকা জরুরি।
শবে বরাতের প্রকৃত শিক্ষা হলো আল্লাহর দিকে ফিরে আসা, পাপ থেকে মুক্তি চাওয়া এবং সৎপথে চলার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা। ২০২৫ সালের শবে বরাত আমাদের জীবনে বরকত ও রহমত বয়ে আনুক, এই দোয়া করি। সবাইকে ধন্যবাদ