শবে বরাতের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়
শবে বরাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যাকে লাইলাতুল বরাত বলা হয়। এটি এমন একটি রাত্রি, যেখানে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন এবং দোয়া কবুল করেন। অনেক মুসলমান এই রাতে বিশেষ ইবাদত করেন, যার মধ্যে নফল নামাজ অন্যতম।
এই আর্টিকেলে আমরা শবে বরাতের নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়, কীভাবে নামাজ আদায় করতে হয়, এবং এই রাতের বিশেষ আমলগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত?
শবে বরাতের গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআনে সরাসরি কোনো উল্লেখ নেই। তবে হাদিসে এর গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়।
হাদিসে শবে বরাতের গুরুত্ব?
নিম্নলিখিত কয়েকটি হাদিস থেকে শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে জানা যায়ঃ
১. হযরত আবু মূসা আশ’আরী (রা.) থেকে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
> “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবানের রাতে (শবে বরাতে) দুনিয়ার দিকে দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।” (ইবনে মাজাহ: 1390, তিরমিজি: 739)।
২. হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত
“একবার আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে রাতে খুঁজতে গিয়ে জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে পেলাম। তিনি বললেন, ‘এই রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করেন।’” (মুসনাদে আহমদ: 26018)
এছাড়া আরও কিছু হাদিস পাওয়া যায়, যা থেকে বোঝা যায় যে শবে বরাতের রাত ইবাদতের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
শবে বরাতের নামাজ ও এতে পড়ার জন্য নির্দিষ্ট সূরা?
শবে বরাতের রাতে বিশেষ কোনো ফরজ নামাজ নেই। তবে মুসলমানরা এই রাতে বিভিন্ন নফল নামাজ আদায় করেন।
আরও পড়ুনঃ শবে বরাত নামাজ কিভাবে পড়তে হয়
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম?
শবে বরাতের রাতে নফল নামাজ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। তবে অনেক আলেম ৬, ৮, ১০, ১২, বা ১০০ রাকাত নফল নামাজ পড়ার পরামর্শ দেন। প্রতিটি দুই রাকাত করে পড়া উত্তম।
প্রথম রাকাতেঃ
১. সুরা ফাতিহা
২. সুরা ইখলাস (৩ বার) অথবা সুরা ফালাক বা সুরা নাস
দ্বিতীয় রাকাতেঃ
১. সুরা ফাতিহা
২. সুরা ইখলাস (৩ বার) অথবা সুরা ফালাক বা সুরা নাস
অনেকে এই রাতে বড় সূরা পড়েন, যেমনঃ
১. সুরা ইয়াসিন
শবে বরাতের রাতে তিনবার সুরা ইয়াসিন পড়ার বিশেষ আমল করা হয়।
২. সুরা মুলক
মৃত্যু ও কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই সূরা পড়া উত্তম।
৩. সুরা দুখান
হাদিসে এসেছে, শবে বরাতে এই সূরা পড়লে গুনাহ মাফ হয়।
১০০ রাকাত নামাজের নিয়ম (কিছু ইসলামিক স্কলারদের মতে)
- প্রতিটি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস ১০ বার পড়তে হয়।
- ১০০ রাকাত নামাজের পরে দীর্ঘ দোয়া করা হয়।
আরও পড়ুনঃ শবে বরাত ২০২৫
শবে বরাতের বিশেষ আমল?
শুধু নামাজ নয়, শবে বরাতের রাতে আরও কিছু ইবাদত করা যায়, যেমনঃ
১. কুরআন তিলাওয়াত
এই রাতে বেশি করে কুরআন পড়া উচিত। বিশেষ করে, সুরা ইয়াসিন, সুরা মুলক, সুরা দুখান পড়ার ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে।
২. তওবা ও ইস্তিগফার
আল্লাহ তায়ালা শবে বরাতের রাতে বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন। এজন্য এই রাতে বেশি বেশি তওবা করা উচিত।
৩. দোয়া ও জিকির
এই রাতে বিশেষ দোয়া পড়তে পারেনঃ
اللهم انك عفو تحب العفو فاعف عني
> “হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
৪. সাদাকা ও দান-খয়রাত
এই রাতে গরিবদের সাহায্য করা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ।
৫. কবর জিয়ারত
রাসূলুল্লাহ (সা.) শবে বরাতে কবরস্থান জিয়ারত করেছেন, তাই আমরাও এই রাতে কবর জিয়ারত করতে পারি।
শবে বরাতের কিছু ভুল ধারণা ও বিদআত?
শবে বরাতের গুরুত্ব অনেক থাকলেও, কিছু ভুল ধারণা রয়েছে, যা এড়িয়ে চলা উচিত।
১. শবে বরাতের জন্য বিশেষ কোনো নামাজ নেই।
কেউ কেউ মনে করেন, ১০০ রাকাত নামাজ ফরজ। তবে এটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। শবে বরাতের নামাজ সাধারণ নফল নামাজের মতোই পড়তে হয়।
আরও পড়ুনঃ শবে বরাতের ফজিলত
২. আতশবাজি বা উৎসব করা ভুল
ইসলামে শবে বরাত উদযাপনের জন্য কোনো আনন্দোৎসব বা আতশবাজির অনুমতি নেই।
৩. বিশেষ খাবার বিতরণ করা
কেউ কেউ মনে করেন, হালুয়া বা বিশেষ খাবার রান্না করা জরুরি। কিন্তু এটি ইসলামে বাধ্যতামূলক নয়।
শেষ কথা
শবে বরাত ইসলামে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি রাত। এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত, বিশেষ করে নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, তওবা, দোয়া ও জিকির। শবে বরাতের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সূরা বাধ্যতামূলক নয়, তবে সুরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক বা সুরা নাস পড়া উত্তম।
আসুন, আমরা শবে বরাতের রাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ইবাদতে মশগুল হই এবং নিজেদের গুনাহ মাফ করানোর জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করি। সবাইকে ধন্যবাদ