তিস্তা মহাপরিকল্পনা কি
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদীকে কেন্দ্র করে একটি বিস্তৃত উন্নয়ন প্রকল্প।যা নদীশাসন, সেচ ব্যবস্থা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে ওই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা কি?
তিস্তা মহাপরিকল্পনা (Teesta Master Plan) হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি ব্যাপক পরিকল্পনা।
এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হল তিস্তা নদীর জল সম্পদকে সুষমভাবে ব্যবহার করা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ব্যবস্থার উন্নতি, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ। তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এই নদীর পানি ও সম্পদ উভয় দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে কৃষি, শিল্প ও গৃহস্থালি কাজে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা এই পানিকে সম্পদকে কার্যকরভাবে ব্যবস্থাপনা করার জন্য প্রস্তাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ গুগল ম্যাপ থেকে আয় করার উপায়
তিস্তা মহাপরিকল্পনায় কি কি আছে?
নিচে তিস্তা মহাপরিকল্পনার দিকসমূহ দেওয়া হলোঃ
১. নদী খনন ও শাসন
১০৮ কিলোমিটার তিস্তা নদী খনন এবং ১৭৩ কিলোমিটার তীর রক্ষা করা হবে, যা নদীর গভীরতা প্রায় ১০ মিটার বৃদ্ধি করবে। এর ফলে সারা বছর নৌ চলাচল সম্ভব হবে এবং বন্যার ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
২. সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন
নদীর পানি সংরক্ষণ করে আধুনিক সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করবে এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব মোকাবেলা করবে।
৩. স্মার্ট সিটি ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন
তিস্তার দুই পাড়ে পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির আদলে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর এবং পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
৪. পরিবেশ সংরক্ষণ ও মৎস্য চাষ
নদীর পরিবেশ সংরক্ষণ এবং আধুনিক মৎস্য চাষ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং স্থানীয় জনগণের পুষ্টি ও আয়ের উৎস বৃদ্ধি করা হবে।
৫. জল ব্যবস্থাপনা
তিস্তা নদীর জলকে সুষমভাবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বণ্টন করা। এই পরিকল্পনায় উভয় দেশের চাহিদা ও অধিকারকে বিবেচনা করা হয়।
৬. বন্যা নিয়ন্ত্রণ
তিস্তা নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেমন বাঁধ নির্মাণ, নদী খনন এবং জলাধার তৈরি।
৭. সেচ ব্যবস্থার উন্নতি
তিস্তা নদীর জল ব্যবহার করে কৃষি ক্ষেত্রে সেচের সুবিধা বৃদ্ধি করা, যাতে উভয় দেশের কৃষকরা উপকৃত হতে পারেন।
৮. জলবিদ্যুৎ উৎপাদন
তিস্তা নদীতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা, যা উভয় দেশের জন্য শক্তির চাহিদা পূরণে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুনঃ অনলাইন ইনকাম সাইট বিকাশ পেমেন্ট
৯. পরিবেশ সংরক্ষণ
তিস্তা নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যেমন নদীর পানি দূষণ রোধ, বনায়ন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ।
১০. আঞ্চলিক সহযোগিতা
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা নদীর জল বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা, যাতে উভয় দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়।
শেষ কথা
এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিস্তা পাড়ের প্রায় ৭ থেকে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।