ইসলাম

রাগ করে তিন তালাক দিলে কি তিন তালাক গণ্য হবে

ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী, রাগের মাথায় তিন তালাক দেওয়া তিন তালাক হিসেবেই গণ্য হবে। তবে এটি একটি গুরুতর বিষয় এবং ইসলামে তালাক দেওয়ার আগে সুস্থ মস্তিষ্কে ও ধৈর্য সহকারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

রাগের মাথায় নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রায়শই অনুতাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইসলামিক আইন অনুযায়ী, যদি কোনো স্বামী একই সময়ে তিন তালাক উচ্চারণ করে, তাহলে তা তিন তালাক হিসেবেই গণ্য হবে।রাগ করে তিন তালাক দিলে কি তিন তালাক গণ্য হবেএবং এরপর স্ত্রীকে হালালা (অন্য কোনো পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এবং সেই বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর) ছাড়া পুনরায় বিবাহ করা সম্ভব হবে না। তবে কিছু ইসলামিক স্কলার এবং আলেমগণ এই বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন।

এবং পরিস্থিতি ও উদ্দেশ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেন। তাই এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন যোগ্য ইসলামিক স্কলার বা আলেমের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাগ করে তিন তালাক দিলে কি তিন তালাক গণ্য হবে?

তালাক ইসলামী শরীয়তে একটি গুরুতর বিষয়. এবং এটি দেওয়া ও কার্যকর হওয়ার কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। রাগের অবস্থায় তালাক দিলে তা কার্যকর হবে কি না, তা মূলত স্বামীর মানসিক অবস্থা ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে।

১. তালাক দেওয়ার জন্য মূল শর্তসমূহ

তালাক কার্যকর হতে হলে কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত হতে হবেঃ

  • স্বামী সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে।
  • তালাক দেওয়ার সময় তার আত্মনিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে।
  • তালাক ইচ্ছাকৃতভাবে দিতে হবে, জোরপূর্বক বা অসচেতন অবস্থায় নয়।
  • স্ত্রী শুদ্ধ (হায়েজ-মাসিক মুক্ত) অবস্থায় থাকতে হবে এবং সহবাস ছাড়া তালাক দিতে হবে।

এখন দেখা যাক, রাগের সময় তালাক দিলে তা কার্যকর হবে কি না।

২. রাগের অবস্থায় তালাকের হুকুম

(ক) সাধারণ রাগ

যদি স্বামী রাগান্বিত থাকেন কিন্তু তিনি যা বলছেন তা বোঝেন এবং নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন, তাহলে তালাক কার্যকর হবে।

উদাহরণস্বরূপঃ স্বামী স্ত্রীকে নিয়ে কোনো বিষয়ে রেগে গেছেন, কিন্তু তারপরও স্বাভাবিকভাবে কথা বলছেন এবং তালাক দিচ্ছেন তাহলে এটি কার্যকর হবে।

(খ) মাঝারি স্তরের রাগ

যদি রাগ এত বেশি হয় যে স্বামী তার স্বাভাবিক আচরণ বজায় রাখতে পারছেন না, কিন্তু তিনি যা বলছেন তা বোঝেন, তবে ইসলামিক ফিকহ অনুযায়ী অনেক বিদ্বান একে কার্যকর মনে করেন। তবে কিছু আলেমের মতে, এমন অবস্থায় দেওয়া তালাক পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।

(গ) চরম রাগ (Severe Anger)

যদি স্বামী এতটাই রেগে যান যে তিনি মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন, নিজের কথা বোঝেন না, বা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন, তাহলে তালাক কার্যকর হবে না।

এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তি যদি এমন কিছু বলেন যা স্বাভাবিক অবস্থায় কখনোই বলতেন না, তবে শরীয়তে এটি গণ্য করা হবে না।

হাদিসের ভিত্তিঃ

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তালাক, দাস মুক্তি ও নিকাহ এ তিনটি বিষয় যদি মজাকেও বলা হয়, তবে তা কার্যকর হয়ে যায়।” (আবু দাউদ, ২১৯৪)।

তবে ইসলামী স্কলাররা বলেন, যদি তালাকদাতা চরম রাগে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, তাহলে এটি কার্যকর হবে না।

৩. তিন তালাক একসঙ্গে দিলে তা কার্যকর হবে কি না?

অধিকাংশ হানাফি, শাফেয়ি ও মালিকি মাজহাবের মতে, একসঙ্গে তিন তালাক দিলে তা কার্যকর হয়ে যাবে এবং চূড়ান্ত তালাক (তালাকে বায়িন) হয়ে যাবে। স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে হালালা (অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ, সহবাস ও বিচ্ছেদ) ছাড়া তা সম্ভব হবে না।

তবে কিছু বিদ্বান (যেমনঃ ইবনে তাইমিয়া ও আহলে হাদিস) বলেন, একসঙ্গে তিন তালাক দিলে তা এক তালাক হিসেবেই গণ্য হবে।

৪. সমাধান ও করণীয়

  • যদি রাগের মুহূর্তে তিন তালাক দেওয়া হয়, তাহলে ইসলামিক স্কলারদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
  • কোনো কোর্ট বা ফতোয়া বোর্ডের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হতে পারে।
  • তালাকের নিয়ম সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত, কারণ এটি ইসলামে একটি গুরুতর বিষয়।

পরামর্শঃ

যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে দ্রুত অভিজ্ঞ ইসলামিক আলেম বা মুফতির কাছে গিয়ে বিস্তারিত জানানো উচিত। তারা কুরআন হাদিসের আলোকে সঠিক সমাধান দিতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button