মেসেজে তালাক দিলে কি তালাক হয়
ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী, মেসেজের মাধ্যমে তালাক দেওয়া নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।আজকের আর্টিকেলে মেসেজে তালাক দিলে কি তালাক হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
মেসেজে তালাক দিলে কি তালাক হয়?
হ্যাঁ, লিখিতভাবে (SMS, WhatsApp, Messenger, চিঠি ইত্যাদির মাধ্যমে) তালাক দিলে তা কার্যকর হতে পারে, তবে কিছু শর্ত পূরণ হতে হবে।
১. তালাকের জন্য প্রধান শর্তসমূহ
তালাক কার্যকর হওয়ার জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ হতে হবেঃ
- স্বামী সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে।
- (অজ্ঞান, মানসিক ভারসাম্যহীন বা চরম রাগে নিয়ন্ত্রণহীন হলে কার্যকর হবে না)
- তালাক দেওয়ার নিয়ত থাকতে হবে।
- (যদি মজা বা রাগের মাথায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বলেন, তাহলে কার্যকর হবে না)
- লিখিত তালাক স্বামীর পক্ষ থেকে দেওয়া হতে হবে।
- স্ত্রী তালাকের সময় হায়েজ-মাসিক মুক্ত থাকতে হবে।
- (অর্থাৎ পবিত্র অবস্থায় তালাক দিতে হবে এবং সে সময় শারীরিক সম্পর্ক না থাকা উচিত)
- তালাকের বক্তব্য স্পষ্ট হতে হবে।
- (অস্পষ্ট বা ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করলে তা নিশ্চিতভাবে কার্যকর নাও হতে পারে)
২. মেসেজ বা লিখিত তালাকের হুকুম
- যদি স্বামী নিজে তালাকের মেসেজ পাঠান
- যদি স্বামী নিজেই লিখে পাঠান এবং তার নিয়ত তালাক দেওয়ার থাকে, তাহলে এটি কার্যকর হবে।
- যদি কোনো ভুলবশত বা রাগের মাথায় লিখে ফেলেন কিন্তু বাস্তবে তালাক দিতে না চান, তবে আলেমদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যদি অন্য কেউ স্বামীর নামে লিখে পাঠায়
যদি স্বামী নিজে না লিখেন, কিন্তু অন্য কেউ তার নামে লিখে পাঠায়, তবে এটি কার্যকর হবে না যদি না স্বামী এটি স্বীকার করেন বা সাক্ষী দ্বারা প্রমাণিত হয়।
যদি স্বামী পরবর্তীতে অস্বীকার করেন
যদি স্বামী বলেন, “আমি তালাকের উদ্দেশ্যে মেসেজ লিখিনি বা কাউকে পাঠাইনি,” তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না যদি না যথেষ্ট প্রমাণ থাকে।
কাগজে লিখে দিলে
চিঠির মাধ্যমে তালাক দিলে সেটিও কার্যকর হবে, তবে শর্ত হলো লিখিত তালাকের উদ্দেশ্য তালাক দেওয়া হতে হবে এবং স্বামী যদি পরে তা স্বীকার করেন, তাহলে তা কার্যকর হবে।
৩. তিন তালাক লিখে দিলে তা কার্যকর হবে কি না?
হানাফি, শাফেয়ি ও মালিকি মাজহাব অনুযায়ীঃ
এক সঙ্গে তিন তালাক লিখে দিলে তা কার্যকর হয়ে যাবে এবং স্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে হারাম হয়ে যাবে। ইবনে তাইমিয়া ও কিছু আহলে হাদিসের মতেঃ একসঙ্গে তিন তালাক দিলে তা এক তালাক হিসেবেই গণ্য হবে।
৪. করণীয় ও পরামর্শ
- যদি ভুলবশত বা রাগের মাথায় লিখে ফেলা হয়, তাহলে ইসলামিক স্কলারদের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
- তালাক দেওয়ার আগে ভালোভাবে চিন্তা করা উচিত, কারণ এটি ইসলামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুতর বিষয়।
- তালাকের পরবর্তী প্রক্রিয়া (ইদ্দত, পুনরায় বিবাহের সুযোগ ইত্যাদি) সম্পর্কে জানা উচিত।
পরামর্শ
যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে একজন যোগ্য আলেম বা ইসলামিক স্কলারের সাথে পরামর্শ করা জরুরি, যিনি আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক নির্দেশনা দিতে পারবেন।
শেষ কথা
সর্বোপরি মেসেজ বা লিখিতভাবে তালাক দেওয়া হলে তা কার্যকর হতে পারে, তবে পরিস্থিতি বুঝে ইসলামিক স্কলারদের পরামর্শ নেওয়া সর্বোত্তম।