রিজার্ভ কি
রিজার্ভ সাধারণত একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঞ্চিত বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্পদের পরিমাণকে বোঝায়, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়।
এটি মূলত আমদানি ব্যয় পরিশোধ, আন্তর্জাতিক ঋণের সুদ পরিশোধ এবং মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিচালনা করে।এই রিজার্ভ মূলত বিভিন্ন উৎস থেকে আসে, যেমন রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য।রিজার্ভের পরিমাণ বেশি থাকলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী থাকে, মুদ্রার মান স্থিতিশীল থাকে, এবং আমদানি ব্যয় নির্বিঘ্নে পরিশোধ করা যায়।
তবে রিজার্ভ কমে গেলে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যেমন মুদ্রার অবমূল্যায়ন, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ অন্যান্য আর্থিক সংকট।
রিজার্ভ মানি কি?
রিজার্ভ মানি (Reserve Money) হল একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারা সরবরাহকৃত মৌলিক অর্থ, যা সাধারণত ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা নগদ অর্থ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তাদের জমাকৃত অর্থের সমষ্টি বোঝায়।
এটি মৌলিক অর্থ (Base Money) বা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অর্থ (High-Powered Money) নামেও পরিচিত।
আরও পড়ুনঃ কুইজ খেলে টাকা ইনকাম app
রিজার্ভ কিভাবে বাড়ে?
একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মূলত বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ও নীতির মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। নিচে রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রধান উপায়গুলো ব্যাখ্যা করা হলোঃ
১. রপ্তানি বৃদ্ধি
একটি দেশ যদি বেশি পরিমাণে পণ্য ও সেবা রপ্তানি করতে পারে, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ হয়, যা রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক। রপ্তানি খাতকে উৎসাহিত করতে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা, কর ছাড় এবং উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করে থাকে।
২. রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি
প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈদেশিক মুদ্রা পাঠালে তা সরাসরি দেশের রিজার্ভে জমা হয়। ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে প্রণোদনা প্রদান, হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সঞ্চয় স্কিম চালু করা হলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পায়।
৩. বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) বৃদ্ধি
বিদেশি কোম্পানিগুলো যখন দেশে বিনিয়োগ করে, তখন বৈদেশিক মুদ্রা সরাসরি রিজার্ভে জমা হয়। সহজ বিনিয়োগ নীতি, কর সুবিধা ও অবকাঠামো উন্নয়ন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক।
৪. বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ গ্রহণ
আন্তর্জাতিক সংস্থা (IMF, World Bank, ADB) বা উন্নত দেশগুলো থেকে পাওয়া অনুদান ও ঋণ দেশের রিজার্ভ বাড়াতে সাহায্য করে। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সহজ শর্তে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করা রিজার্ভ বৃদ্ধির একটি উপায়।
৫. পর্যটন ও সেবা খাতের আয় বৃদ্ধি
বিদেশি পর্যটকরা দেশ ভ্রমণ করলে তারা বৈদেশিক মুদ্রায় খরচ করে, যা রিজার্ভে যুক্ত হয়। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক মানের সেবা বৃদ্ধি করা হলে এই খাত থেকে আয় বাড়তে পারে।
৬. আমদানি ব্যয় হ্রাস
যদি আমদানি কমানো যায়, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা কম খরচ হবে এবং রিজার্ভ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। স্থানীয় শিল্পের উন্নয়ন, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন এবং সঠিক আমদানি নীতি গ্রহণ করলে আমদানি নির্ভরতা কমে।
৭. সরকারি নীতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কেনাবেচার মাধ্যমে মুদ্রাবাজারে হস্তক্ষেপ করতে পারে, যাতে রিজার্ভের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। মুদ্রানীতি, সুদের হার নিয়ন্ত্রণ এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হলে রিজার্ভ বৃদ্ধির সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুনঃ গেম খেলে টাকা আয় বিকাশে 2025 apps
রিজার্ভ কীভাবে ব্যবহৃত হয়?
১. আমদানি ব্যয় পরিশোধে
বাংলাদেশ প্রতি মাসে আমদানি করতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করে।
২. ঋণের সুদ পরিশোধে
আন্তর্জাতিক সংস্থা বা দেশগুলোর কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধে রিজার্ভ ব্যবহৃত হয়।
৩. মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে
টাকার মান ধরে রাখতে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ ব্যবহার করে।
শেষ কথা
রিজার্ভের পরিমাণ একটি দেশের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তার প্রতিফলন। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যেমনঃ প্রবাসী আয় বৃদ্ধি করা, রপ্তানি খাতকে সহায়তা করা এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা।