রিজার্ভ কিভাবে হিসাব করা হয়
একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। এটি মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক সংরক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এর বিশেষ ড্রয়িং অধিকার (SDR)এবং অন্যান্য বৈদেশিক সম্পদের সমষ্টি। রিজার্ভের পরিমাণ দেশের আমদানি সক্ষমতা, মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
রিজার্ভের হিসাব করার জন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দিষ্ট উপাদানগুলোর বাজারমূল্য বিবেচনা করে মোট রিজার্ভ নির্ধারণ করে। এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল। রিজার্ভের যথাযথ ব্যবস্থাপনা দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে সহায়ক হয়।
রিজার্ভ কিভাবে হিসাব করা হয়?
একটি দেশের মোট রিজার্ভ (Foreign Exchange Reserve) সাধারণত সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক সংরক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ বোঝায়। এটি হিসাব করা হয় কয়েকটি প্রধান উপাদান বিবেচনা করে।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে ফ্রিতে টাকা ইনকাম করব
রিজার্ভ হিসাবের প্রধান উপাদান?
১. বিদেশি মুদ্রা (Foreign Currencies)
বিভিন্ন দেশের মুদ্রা যেমনঃ ডলার (USD), ইউরো (EUR), পাউন্ড (GBP) ইত্যাদি।
২. সোনা (Gold Reserves)
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে থাকা স্বর্ণের পরিমাণ আন্তর্জাতিক মূল্যে পরিমাপ করা হয়।
৩. আইএমএফ (IMF) ওয়ার্কিং ব্যালেন্স ও এসডিআর (Special Drawing Rights – SDR)
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) থেকে পাওয়া বিশেষ অধিকার যা রিজার্ভের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
৪. বৈদেশিক ব্যাংকে রাখা আমানত (Foreign Bank Deposits & Assets)
বিদেশে রাখা বিভিন্ন ব্যাংক ডিপোজিট ও বন্ড।
৫. বৈদেশিক বিনিয়োগ (Foreign Investments & Securities)
বিভিন্ন দেশের সরকার বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইস্যু করা বন্ড ও অন্যান্য সম্পদ।
আরও পড়ুনঃ এড দেখে টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট
রিজার্ভ হিসাব করার প্রক্রিয়া?
রিজার্ভ নির্ধারণের জন্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংক উল্লিখিত সব উপাদানের মোট বাজারমূল্য (Market Value) যোগ করে মোট রিজার্ভ হিসাব করে।
উদাহরণঃ
ধরা যাক, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের উপাদানগুলো হলোঃ
বিদেশি মুদ্রাঃ ৩০ বিলিয়ন USD
স্বর্ণঃ ২ বিলিয়ন USD
এসডিআরঃ ১ বিলিয়ন USD
বৈদেশিক ব্যাংকে রাখা অর্থ ও বন্ডঃ ৭ বিলিয়ন USD
➡ মোট রিজার্ভ = ৩০ + ২ + ১ + ৭ = ৪০ বিলিয়ন USD
রিজার্ভের গুরুত্ব?
- আমদানি ব্যয় মেটানো
- মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখা
- বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখা
- আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধ
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশী অ্যাপ প্রতিদিন 1000 টাকা আয় পেমেন্ট বিকাশ
রিজার্ভ হিসাব করার পদ্ধতি?
রিজার্ভ হিসাব করার পদ্ধতি নির্ভর করে কোন ধরনের রিজার্ভের কথা বলা হচ্ছে তার উপর। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে রিজার্ভ হিসাব করা হয়।
যেমনঃ ব্যাংকিং, অর্থনীতি বা প্রকৌশল। নিচে কিছু সাধারণ প্রেক্ষাপটে রিজার্ভ হিসাব করার পদ্ধতি আলোচনা করা হলোঃ
১. ব্যাংকিং রিজার্ভ
ব্যাংকগুলো তাদের আমানতকারীদের জমাকৃত অর্থের একটি অংশ রিজার্ভ হিসেবে রাখে। এটি সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা নির্ধারিত হয়।
রিজার্ভ রেশিও (RR)
রিজার্ভ রেশিও হলো আমানতের যে শতাংশ ব্যাংক রিজার্ভ হিসেবে রাখে।
রিজার্ভ= আমানত × রিজার্ভ রেশিও
২. অর্থনৈতিক রিজার্ভ
এটি সাধারণত একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা সোনার রিজার্ভকে বোঝায়। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়।
বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ
এটি বিভিন্ন মুদ্রা, সোনা এবং অন্যান্য সম্পদে গঠিত হতে পারে।
রিজার্ভ = বৈদেশিক মুদ্রা + সোনা + অন্যান্য সম্পদ
৩. প্রকৌশল রিজার্ভ
প্রকল্প ব্যবস্থাপনায়, রিজার্ভ হলো অতিরিক্ত সময় বা সম্পদ যা অপ্রত্যাশিত সমস্যা মোকাবিলার জন্য রাখা হয়।
কন্টিনজেন্সি রিজার্ভ
রিজার্ভ = প্রকল্প বাজেট × রিজার্ভ শতাংশ
৪. বীমা রিজার্ভ
বীমা কোম্পানিগুলো দাবি পরিশোধের জন্য রিজার্ভ রাখে।
দাবি রিজার্ভ
রিজার্ভ = অনুমানিত দাবি + অনিশ্চিত দাবি
আরও পড়ুনঃ ১০০ টাকা ডিপোজিট সাইট
৫. কোম্পানি রিজার্ভ
কোম্পানিগুলো তাদের লাভের একটি অংশ রিজার্ভ হিসেবে রাখে।
লাভ রিজার্ভ
রিজার্ভ = নিট লাভ × রিজার্ভ শতাংশ
উদাহরণঃ
যদি একটি ব্যাংকের আমানত ১০০ কোটি টাকা হয় এবং রিজার্ভ রেশিও ১০% হয়, তাহলে রিজার্ভ হবেঃ
রিজার্ভ = ১০০ কোটি × ১০% = ১০ কোটি টাকা
বিঃদ্রঃ
রিজার্ভ হিসাব করার সময় সংশ্লিষ্ট নিয়ম এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।