রমজানের প্রস্তুতি সম্পর্কে হাদিস
রমজান ইসলামের অন্যতম বরকতময় ও গুরুত্বপূর্ণ মাস। যা আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। এ মাসে মুসলমানদের জন্য রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে।যা কেবল শারীরিক সংযম নয়। বরং আত্মিক পরিশুদ্ধিরও মাধ্যম। রমজান থেকে সর্বোচ্চ উপকার লাভ করতে হলে এর পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমজানের প্রস্তুতির গুরুত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন, রমজানের আগমনের সুসংবাদ দিতেন এবং এই মাসে ইবাদত বাড়ানোর পরামর্শ দিতেন। সুতরাং, সঠিক প্রস্তুতির মাধ্যমে রমজানকে ফলপ্রসূ করা সম্ভব, যা আমাদের জন্য ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ বয়ে আনবে।
রমজানের প্রস্তুতি সম্পর্কে হাদিস?
রমজান মাসের প্রস্তুতি এবং এর ফজিলত সম্পর্কে ইসলামে অনেক হাদিস রয়েছে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস উল্লেখ করা হলোঃ
১. রমজানের আগে শাবান মাসে প্রস্তুতি
হাদিসঃ হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি এই মাসে আর রোজা ছাড়বেন না।
আবার কখনও এত কম রোজা রাখতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি এই মাসে আর রোজা রাখবেন না।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৯৬৯)।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন।
২. রমজানের ফজিলত
হাদিসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৯)।
এই হাদিসে রমজান মাসের বিশেষ ফজিলত এবং এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
৩. রমজানে ইবাদতের গুরুত্ব
হাদিসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা রাখে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৯০১)।
এই হাদিসে রমজান মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হওয়ার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
৪. সেহরি খাওয়ার গুরুত্ব
হাদিসঃ হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৯২৩)।
এই হাদিসে সেহরি খাওয়ার গুরুত্ব এবং এর বরকত সম্পর্কে বলা হয়েছে।
৫. ইফতারের সময় দোয়া কবুল হওয়া
হাদিসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রোজাদারের ইফতারের সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না।” (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৭৫৩)।
এই হাদিসে ইফতারের সময় দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সুযোগের কথা বলা হয়েছে।
৬. লাইলাতুল কদরের ফজিলত
হাদিসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে ইবাদত করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৪)।
এই হাদিসে লাইলাতুল কদরের বিশেষ ফজিলত এবং এর গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
শেষ কথা
এই হাদিসগুলো থেকে রমজান মাসের প্রস্তুতি, এর ফজিলত এবং ইবাদতের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা যায়। রমজান মাসে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া এবং তওবা করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা উচিত।