ইসলাম

রোজার করণীয় ও বর্জনীয়

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা (সিয়াম) অন্যতম। এটি আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। প্রতি বছর রমজান মাসে মুসলমানরা সুবহে সাদিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত পানাহার ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকে।

রোজা শুধু খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের নাম নয়। বরং এটি আত্মসংযম, ধৈর্য, সহনশীলতা এবং আত্মিক পরিশুদ্ধির অনুশীলন।রোজার মাধ্যমে মানুষ নিজের ইচ্ছাশক্তিকে সংযত করতে শেখে এবং নৈতিক চরিত্র গঠনের সুযোগ পায়।রোজার করণীয় ও বর্জনীয়

তবে রোজার সঠিক প্রতিফল লাভের জন্য কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা জরুরি। রোজার করণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সেহরি খাওয়া, নিয়মিত নামাজ আদায়, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা করা এবং উত্তম চরিত্র বজায় রাখা।

অন্যদিকে মিথ্যা বলা, গিবত করা, ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া, অনৈতিক কার্যকলাপ করা ইত্যাদি রোজার বর্জনীয় কাজের মধ্যে পড়ে। একজন মুসলমানের উচিত রোজার এই করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো মেনে চলা

যাতে সে রোজার পূর্ণ সওয়াব অর্জন করতে পারে এবং পরিপূর্ণ আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হয়।

রোজার করণীয় ও বর্জনীয়?

রোজা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা সঠিকভাবে আদায় করার জন্য কিছু করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় রয়েছে। রোজার সময় কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়,

তা জেনে রাখা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে রোজার করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলোঃ

রোজার করণীয়?

১. নিয়ত করা

রোজার জন্য সঠিক নিয়ত করা জরুরি। রাতেই রোজার নিয়ত করে নেওয়া উত্তম। নিয়ত মনে মনে করা যায়, মুখে বলার প্রয়োজন নেই।

২. সেহরি খাওয়া

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ “সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে।” (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯২৩)

সেহরি শেষ সময়ে খাওয়া সুন্নত, তবে ফজরের আজান শুরু হওয়ার আগেই তা শেষ করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ রমজানের প্রস্তুতি সম্পর্কে হাদিস

৩. ইফতারে দেরি না করা

সূর্যাস্তের পরপরই ইফতার করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ “লোকেরা ততক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতক্ষণ তারা দ্রুত ইফতার করবে।” (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯৫৭)।

৪. দোয়া করা

ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইফতারের সময় এই দোয়া পড়তেনঃ
“ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ”

অর্থঃ “পিপাসা দূরীভূত হয়েছে, শিরা-উপশিরা সিক্ত হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ সওয়াব ঠিক হয়ে গেছে।”
(সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ২৩৫৭)

৫. কুরআন তিলাওয়াত ও ইবাদত করা

রমজান মাসে কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, জিকির-আজকার এবং অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে সময় কাটানো উচিত।

৬. সদকা ও দান-খয়রাত করা

রমজান মাসে সদকা ও দান-খয়রাতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এই মাসে বেশি দান করতেন।

৭. তাকওয়া অর্জন

রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করা। আল্লাহ বলেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনঃ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৩)

আরও পড়ুনঃ রমজান উপলক্ষে আলোচনা

রোজার বর্জনীয়?

১. খাওয়া-দাওয়া ও পান করা

সুবহে সাদিক (ফজরের আজান) থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া, পান করা এবং যৌন সম্পর্ক থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা obligatory (ফরজ)।

২. গিবত ও অপবাদ দেওয়া

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ ত্যাগ করে না, তার শুধু ক্ষুধা ও পিপাসায় কষ্ট পাওয়া ছাড়া আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।” (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯০৩)

গিবত (পরনিন্দা), অপবাদ, মিথ্যা কথা এবং অশ্লীল আচরণ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা উচিত।

৩. অযথা ঝগড়া-বিবাদ করা

রোজাদার ব্যক্তির উচিত নয় অযথা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ “যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় বা তোমার সাথে ঝগড়া করে, তাহলে তুমি বলো, আমি রোজাদার।” (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৪)।

৪. অশ্লীল কথা ও কাজ

রোজার সময় অশ্লীল কথা, গান-বাজনা, অশ্লীল চলচ্চিত্র দেখা এবং অন্যান্য গুনাহের কাজ থেকে দূরে থাকা উচিত।

৫. ইফতারে অপচয় না করা

ইফতারে অপচয় করা উচিত নয়। প্রয়োজনীয় পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা এবং অন্যের সাথে ভাগ করে খাওয়া উত্তম।

৬. অলসতা ও সময় নষ্ট করা

রমজান মাসে অলসভাবে সময় নষ্ট না করে ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত এবং অন্যান্য ভালো কাজে সময় ব্যয় করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ রমজানের ফাজায়েল ও মাসায়েল

রোজা ভঙ্গকারী বিষয় | যে কাজে রোজা ভেঙে যায়

  • ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া-দাওয়া বা পান করা।
  • স্ত্রীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা।
  • ধূমপান করা।
  • ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা।
  • হায়েজ বা নিফাসের রক্ত দেখা দেওয়া।
  • কুলি করার সময় পানি গিলে ফেলা (যদি পানি গলায় চলে যায়)।

শেষ কথা

রোজা শুধু ক্ষুধা ও পিপাসা সহ্য করার নাম নয়। বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ, যা আমাদের আত্মসংযম, তাকওয়া এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি অর্জনে সাহায্য করে।

রোজার সময় করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো মেনে চললে আমরা রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারব এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে সক্ষম হব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button