তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের
রমজান মাস ইসলামের অন্যতম পবিত্র মাস। যেখানে রোজা পালন, ইবাদত-বন্দেগি এবং বিশেষ নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। তারাবির নামাজ এই মাসের বিশেষ ইবাদতের অংশ।
যা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করেছেন এবং উম্মতকে আদায়ের তাগিদ দিয়েছেন। এই নামাজ নফল হলেও সুন্নাত মুয়াক্কাদা হিসেবে গণ্য হয়, অর্থাৎ এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।নারীদের জন্য তারাবির নামাজ আদায়ের সুযোগ পুরুষদের মতোই রয়েছে। যদিও মহিলারা মসজিদে গিয়ে জামাতে অংশ নিতে পারেন, ইসলামে তাদের জন্য ঘরে নামাজ পড়াকে উত্তম হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
মহিলারা একা বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়তে পারেন। এই নামাজ তাদের আত্মিক প্রশান্তি বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ সুগম করে। রমজান মাসের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ ইবাদত তারাবির নামাজের মাধ্যমে মহিলারা যেমন সওয়াব অর্জন করতে পারেন।
তেমনই তাদের আখিরাতের কল্যাণের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক নিয়ম-কানুন মেনে তারাবির নামাজ আদায় করা হলে, এটি রমজানের বরকত ও রহমত লাভের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে।
তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের?
তারাবিহ নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ ইবাদত, যা রাতের নামাজ হিসেবে পরিচিত। এটি পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য সুন্নত। মহিলাদের জন্য তারাবিহ নামাজের নিয়ম-কানুন নিম্নরূপঃ
১. নিয়ত করা
তারাবিহ নামাজের জন্য সঠিক নিয়ত করা জরুরি। মনে মনে বা মুখে নিয়ত করতে হবেঃ “আমি তারাবিহ নামাজ আদায়ের নিয়ত করছি আল্লাহু আকবর ।”
২. রাকাত সংখ্যা
তারাবিহ নামাজ সাধারণত ২০ রাকাত আদায় করা হয়, তবে ৮ রাকাতও আদায় করা যায়। প্রতি ২ রাকাত পর সালাম ফিরাতে হয়।
৩. নামাজের ধরণ
- তারাবির নামাজ দুই রাকাত করে পড়তে হয়।
- প্রতি দুই রাকাত শেষে সালাম ফেরাতে হবে।
- ২০ রাকাত পড়া সুন্নাত মুয়াক্কাদা, তবে আপনি সক্ষমতা অনুযায়ী ৮, ১২ বা ২০ রাকাত পড়তে পারেন।
৪. জামাতের সাথে আদায়
মহিলারা ঘরে একাকী বা পরিবারের অন্যান্য মহিলাদের সাথে জামাত করে তারাবিহ নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করাও বৈধ, যদি সেখানে সুবিধা ও পর্দার ব্যবস্থা থাকে।
৫. কিরাত ও দোয়া
তারাবিহ নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়। মহিলারা চাইলে নিঃশব্দে বা আস্তে আস্তে তিলাওয়াত করতে পারেন।
প্রতি ৪ রাকাত পর বা নামাজ শেষে দোয়া ও ইস্তিগফার করা যেতে পারে।
৬. বিরতি
তারাবিহ নামাজে প্রতি ৪ রাকাত পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া সুন্নত। এই সময়ে জিকির, দোয়া বা কুরআন তিলাওয়াত করা যায়।
৭. ওয়াক্ত
তারাবিহ নামাজ ইশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত আদায় করা যায়। তবে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আদায় করা বেশি ফজিলতপূর্ণ।
৮. পর্দা ও শালীনতা
মহিলাদের জন্য পর্দা রক্ষা করে নামাজ আদায় করা জরুরি। ঘরে নামাজ আদায় করলে পর্দার চিন্তা কম থাকে।
৯. শারীরিক অসুবিধা
যদি মহিলাদের শারীরিক অসুবিধা (যেমনঃ হায়েজ, নিফাস ইত্যাদি) থাকে, তাহলে সেই সময় নামাজ আদায় করা যাবে না। পরে কাজা করারও প্রয়োজন নেই, কারণ তারাবিহ নামাজ কাজা ওয়াজিব নয়।
১০. ইতিকাফ
রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নত। মহিলারা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে ইতিকাফ করতে পারেন, তবে পর্দা ও শালীনতা বজায় রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজ কত রাকাত
১১. দোয়া কুনুত
কিছু মাজহাবে তারাবিহ নামাজে দোয়া কুনুত পড়া হয়। মহিলারাও এটি পড়তে পারেন, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ
- মহিলারা বাসায় একা পড়তে পারেন বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামাতে পড়তে পারেন।
- নামাজের পোশাক শালীন হতে হবে এবং শরীরের সব অংশ ঢাকা থাকতে হবে (মুখ ও হাতের কবজি ব্যতীত)।
- আজান ও ইকামত ছাড়াই পড়া যায়, তবে জামাত হলে ইকামত দেওয়া যেতে পারে।
শেষ কথা
তারাবিহ নামাজ রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মহিলারা ঘরে বা মসজিদে আদায় করতে পারেন। পর্দা ও শালীনতা বজায় রেখে ইবাদত করা জরুরি।