তারাবি নামাজ কি | তারাবির নামাজের ইতিহাস
তারাবি নামাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত, যা রমজান মাসের বিশেষ আমল হিসেবে পালিত হয়। এটি মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।আজকের আর্টিকেলে তারাবি শব্দের অর্থ কি, তারাবি নামাজ কি ও তারাবির নামাজের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
তারাবি শব্দের অর্থ কি?
তারাবি শব্দটি আরবি ভাষা থেকে উদ্ভূত এবং এর মূল শব্দ হল “تَرَاوِيح” (তারাবিহ)। এই শব্দটির অর্থ হলো বিশ্রাম নেওয়া বা আরাম করা।
তারাবি নামাজের সময় প্রতি ২ বা ৪ রাকাত নামাজ আদায় করার পর কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নেওয়া হয়। এই বিশ্রামের সময় সাধারণত কুরআন তিলাওয়াত, জিকির বা দুআ করা হয়। এই বিশ্রামের প্রথা থেকেই নামাজটির নাম তারাবি নামাজ রাখা হয়েছে।
এভাবে, তারাবি নামাজের নামকরণ করা হয়েছে নামাজের মধ্যে বিশ্রাম নেওয়ার এই বিশেষ প্রথার কারণে। এটি রমজান মাসের রাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে পরিচিত।
তারাবি নামাজ কি?
তারাবি নামাজ হলো এক বিশেষ নফল নামাজ, যা রমজান মাসের প্রতি রাতের ঈশার নামাজের পর আদায় করা হয়। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা (নিয়মিত আদায়ের সুন্নত) এবং সাধারণত ২০ রাকাত পড়া হয়, যদিও কিছু মতানুসারে ৮ রাকাতও পড়া যায়।
তারাবি নামাজের মূল উদ্দেশ্য হলো রমজান মাসে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। এই নামাজ জামাতে আদায় করা সুন্নত এবং সাধারণত মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।
হাফিজরা তারাবির নামাজে কোরআন তিলাওয়াত করেন, যা কখনো পুরো রমজান মাসজুড়ে সম্পূর্ণ কোরআন খতমের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
তারাবির নামাজের ইতিহাস?
তারাবি নামাজের ইতিহাস ইসলামের প্রথম যুগ থেকে শুরু। এটি মূলত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময়ে চালু হয় এবং খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সময় থেকে সংগঠিতভাবে জামাতে পড়ার নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সময়ঃ
রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে কিয়ামুল লাইল (রাতের নামাজ) আদায় করতেন, যা পরবর্তীতে তারাবি নামাজ নামে পরিচিত হয়।
প্রথম দিকে তিনি সাহাবিদের সঙ্গে কয়েক রাত মসজিদে জামাতে তারাবি পড়েন, কিন্তু পরে তিনি এটি বন্ধ করে দেন, যাতে এটি ফরজ হিসেবে গণ্য না হয় এবং উম্মতের ওপর কঠিন হয়ে না যায়।
তিনি উৎসাহিত করেন, যাতে মুসলমানরা নিজ নিজ ঘরে এই নামাজ আদায় করে।
খলিফা উমর (রাঃ) এর সময়
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ইন্তেকালের পর সাহাবারা বিভিন্নভাবে তারাবি আদায় করতেন।
খলিফা উমর (রাঃ) দেখলেন যে, মানুষ আলাদা আলাদা ভাবে নামাজ আদায় করছে, তাই তিনি সবাইকে একত্রিত করে উবাই ইবন কাব (রাঃ)-এর নেতৃত্বে ২০ রাকাত তারাবি জামাতে আদায়ের ব্যবস্থা করেন।
সেই থেকে আজ পর্যন্ত মসজিদে জামাতে তারাবি নামাজ আদায়ের এই পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত আরবিতে
পরবর্তী সময়ে প্রচলন
- ইসলামের বিভিন্ন মাজহাব ও মুসলিম সমাজে তারাবি নামাজ ২০ বা ৮ রাকাত হিসেবে চালু রয়েছে।
- বিশেষ করে মক্কা ও মদিনার হারাম শরিফে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ জামাতে আদায় করা হয়।
- মুসলিম বিশ্বজুড়ে তারাবি নামাজ রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
শেষ কথা
অতএব, তারাবি নামাজের ইতিহাস ইসলামের প্রথম যুগ থেকে শুরু হয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে টিকে আছে, যা মুসলমানদের কোরআনের সাথে সম্পর্ক বাড়ানো ও আত্মশুদ্ধির সুযোগ করে দেয়।