ইসলাম

তারাবির নামাজের হুকুম কি

তারাবি হল রমজান মাসের বিশেষ নফল ইবাদত, যা এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর পড়ে থাকে।তারাবির নামাজের হুকুম কিএটি শুধুমাত্র রমজান মাসেই আদায় করা হয় এবং এর জন্য বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

তারাবির নামাজের হুকুম কি?

তারাবির নামাজ সুন্নতে মুআক্কাদা, অর্থাৎ এটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালনীয় সুন্নত। ইসলামের প্রথম যুগ থেকে সকল মুসলমান নিয়মিত এটি আদায় করে আসছেন।

হাদিস দ্বারা প্রমাণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের কিয়াম (তারাবি) আদায় করবে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (সহিহ বুখারি: ২০০৮, সহিহ মুসলিম: ৭৬০)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, তারাবি নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি আদায় করলে মহান আল্লাহ পাপ ক্ষমা করে দেন।

তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা?

তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে অধিকাংশ আলেমের মতে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর যুগ থেকে সাহাবায়ে কেরাম এবং খলিফাদের সময় ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়া সুন্নত।

প্রমাণঃ

হজরত উমর (রা.) এর খিলাফতের সময় সাহাবাগণ সম্মিলিতভাবে ২০ রাকাত তারাবি জামাতে আদায় করতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৭৭৬৭)

ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ি ও ইমাম আহমদ (রহ.) এর মতে, ২০ রাকাত তারাবি পড়াই উত্তম ও নির্ভরযোগ্য আমল। কিছু মতানুসারে ৮ রাকাতও জায়েজ আছে, তবে ২০ রাকাত পড়াই অধিক নিরাপদ ও সুন্নাতের অনুসরণ।

তারাবির নামাজের সময়?

তারাবি নামাজ এশার নামাজের পর থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত যে কোনো সময় পড়া যায়। তবে সাধারণত মুসলিম উম্মাহ এশার পরই জামাতে আদায় করে থাকে।

তারাবির জামাতে পড়া উত্তম, তবে একাকীও পড়া যায়?

রাসুলুল্লাহ (সা.) কয়েকদিন সাহাবাদের সাথে জামাতে তারাবি পড়েন, এরপর নিয়মিত জামাতে না পড়ে একাকী পড়েন, যেন এটি ফরজ মনে না করা হয়।

হজরত উমর (রা.) তাঁর খিলাফতের সময় উবাই ইবনে কাব (রা.) কে ইমাম বানিয়ে মুসলমানদের একত্রিত করে জামাতে তারাবি পড়ার ব্যবস্থা করেন। (বুখারি: ২০১০)

তাই তারাবি জামাতে পড়া উত্তম, তবে কেউ চাইলে একাকীও পড়তে পারে।

মহিলাদের জন্য তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম?

মহিলারাও তারাবি পড়তে পারেন, তবে তাদের জন্য বাড়িতে একাকী পড়াই উত্তম।

তারাবির নামাজের ফজিলত?

তারাবির নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে, যেমনঃ

গুনাহ মাফ

পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (বুখারি: ২০০৮)

লাইলাতুল কদরের প্রস্তুতি

তারাবি পড়লে লাইলাতুল কদরের রাতের ইবাদত সহজ হয়।

নেক আমল বৃদ্ধি

এক রাতের তারাবি পড়া মানে পুরো রাত নামাজে কাটানোর সমতুল্য। (তিরমিজি: ৮০৬)

আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজ কত রাকাত

তারাবির নামাজের নিয়ম?

  • প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফেরানো হয়।
  • চার রাকাত পড়ে অল্প সময় বিশ্রাম নেওয়া যায় (এটিই “তারাবি” শব্দের অর্থ)।
  • সাধারণত তারাবির সাথে কুরআন খতম করার চেষ্টা করা হয়।

সংক্ষেপে তারাবির আমল?

  • রমজানের প্রতি রাতে এশার পর ২০ রাকাত তারাবি পড়া সুন্নত।
  • জামাতে পড়া উত্তম, তবে একাকীও পড়া যায়।
  • নামাজের পর আল্লাহর কাছে দোয়া করা ও ইবাদত করা ফজিলতপূর্ণ।

শেষ কথা

তারাবির নামাজ সুন্নতে মুআক্কাদা এবং এটি রমজানের অন্যতম বড় ইবাদত। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও মুসলিম উম্মাহ বরাবরই গুরুত্বসহকারে এই নামাজ আদায় করে আসছেন। তাই আমাদেরও উচিত তারাবির নামাজকে গুরুত্ব দেওয়া এবং নিয়মিত আদায় করা।

আল্লাহ আমাদের সকলকে রমজানে তারাবির নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন, আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button