ইফতার শব্দের অর্থ কি
ইফতার (إفطار) আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো “রোজা ভাঙা” বা “উপবাস ভঙ্গ করা“। এটি ইসলামের অন্যতম প্রধান ইবাদত রোজা (সিয়াম) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।সারাদিন রোজা রাখার পর সূর্যাস্তের সময় (মাগরিব আজানের পর) যে খাবার গ্রহণ করে রোজা ভাঙা হয়, সেটিই ইফতার।
ইসলামে ইফতারের গুরুত্ব?
ইফতার শুধু খাবার গ্রহণ নয়, এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। হাদিসে ইফতারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
১. রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত আছে
নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “রোজাদারের জন্য দুটি খুশির সময় আছে: এক. যখন সে ইফতার করে, দুই. যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে।” (বুখারি ও মুসলিম)
২. ইফতার দ্রুত করা সুন্নাত
নবী (সা.) বলেছেন, “মানুষ যতদিন ইফতার করতে দেরি না করবে না, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।” (বুখারি ও মুসলিম)
অর্থাৎ, সূর্যাস্তের পর দ্রুত ইফতার করা সুন্নাত ও কল্যাণকর।
৩. খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত
হাদিসে এসেছে, “রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, যদি তা না পেতেন তবে শুকনো খেজুর খেতেন, আর যদি সেটাও না থাকত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।” (আবু দাউদ, তিরমিজি)
ইফতারের দোয়া?
ইফতারের সময় বিশেষ দোয়া পড়া সুন্নাতঃ
اللهم لك صمت وبك آمنت وعلى رزقك أفطرت
উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া বিকা আমানতু, ওয়া আলা রিজকিকা আফতরতু।”
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি, তোমার ওপর ঈমান এনেছি এবং তোমারই রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।” (আবু দাউদ, ইবন মাজাহ)।
ইফতারের খাবার ও রীতি?
ইসলামে ইফতার করার জন্য বিশেষ কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তবে সুন্নাত অনুযায়ী কিছু বিষয় অনুসরণ করা উত্তমঃ
- খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার শুরু করা।
- ইফতার দেরি না করা, আজানের পর দ্রুত ইফতার করা।
- ইফতার শেষে মাগরিব নামাজ পড়া।
- হালাল ও পরিমিত খাবার গ্রহণ করা।
- গরিব ও অসহায়দের ইফতার করানো (এর বিশাল সওয়াব রয়েছে)।
আরও পড়ুনঃ পৃথিবীতে কোন ব্যক্তি সর্বপ্রথম ফরজ রোজা রেখেছিলেন
ইফতার করানোর ফজিলত?
ইসলামে অন্য কাউকে ইফতার করানো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে, তবে রোজাদারের সওয়াব কোনো অংশও কমবে না।” (তিরমিজি, ইবন মাজাহ)
শেষ কথা
ইফতার শুধু রোজা ভাঙার মাধ্যম নয়, এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ আমল, যা রোজাদারের জন্য রহমত, বরকত ও কল্যাণ বয়ে আনে। নবী (সা.)-এর সুন্নাত অনুযায়ী ইফতার করা এবং অন্যদের ইফতার করানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।