ইসলাম

ইফতার খাওয়ানোর ফজিলত

ইফতার খাওয়ানোর অনেক ফজিলত আছে। ইসলামি শরীআত অনুযায়ী, রমজান মাসে উপবাসী ব্যক্তিকে ইফতার খাওয়ানো একটি মহান কাজ এবং এর মাধ্যমে অনেক সওয়াব লাভ হয়। বিশেষভাবে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃইফতার খাওয়ানোর ফজিলত“যে ব্যক্তি উপবাসীকে ইফতার খাওয়াবে, তার জন্য উপবাসী ব্যক্তির মতো সওয়াব লেখা হবে, আর সেই ব্যক্তির সওয়াব থেকে কিছুই কম হবে না।” (তিরমিজি)।

এছাড়াও, ইফতার খাওয়ানোর ফলে দান-খয়রাতের সওয়াবও মিলতে পারে, যা পরকালে খুবই উপকারী। ইফতার খাওয়ানোর মাধ্যমে সমাজে একে অপরকে সাহায্য করার ও একে অপরকে ভালোবাসার একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়।

ইফতার খাওয়ানোর ফজিলত?

ইফতার খাওয়ানোর ফজিলত ইসলামের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসে রোজাদারদের ইফতার করানো এক ধরনের দান। এবং এটি আল্লাহর কাছে বড় সওয়াব অর্জন করার একটি মাধ্যম। ইসলামের বিভিন্ন হাদিস থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

১. সওয়াব লাভ

রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য সেই রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব লেখা হবে, তবে তার সওয়াব থেকে কিছু কম হবে না।

(তিরমিজি) এতে বোঝানো হচ্ছে যে, একজন রোজাদারকে ইফতার করানোর মাধ্যমে আপনি তার রোজার পূর্ণ সওয়াব লাভ করবেন, যদিও আপনি নিজে রোজা রাখছেন না। এটি এমন একটি কাজ যার মাধ্যমে খুব সহজে সওয়াব অর্জন করা যায়।

২. সাহায্য ও সহানুভূতি

ইফতার খাওয়ানো মুসলিমদের মধ্যে একে অপরকে সাহায্য করার এবং সহানুভূতির সম্পর্ক গড়ে তোলে। রমজান মাসে, যখন মানুষ রোজা থাকে, তখন তাদের ইফতার করানো একটি মহৎ কাজ।

এটি মুসলিম সমাজের মধ্যে সবার প্রতি সহানুভূতি এবং ভালোবাসা বৃদ্ধি করে এবং একে অপরকে সাহায্য করার চেতনাকে শক্তিশালী করে।

৩. আল্লাহর সন্তুষ্টি

ইফতার খাওয়ানো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। রোজাদারদের জন্য ইফতার করালে, আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন এবং পরকালে তাকে পুরস্কৃত করেন। এটি আল্লাহর কাছে দান ও খোদার পথে চলার একটি প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়।

৪. অসহায়দের সাহায্য

রমজান মাসে অনেক অসহায় মানুষ, গরিব ও অভাবী পরিবার থাকে যারা নিজেদের জন্য ইফতার ব্যবস্থা করতে পারে না। এই সময়ে তাদেরকে ইফতার করানো তাদের জন্য একটি দান হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি সাধ্যমতো সবার মাঝে সুশীল সমাজ গড়ে তোলে এবং একে অপরের প্রতি দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করে।

৫. রোজার পূর্ণতা

ইফতার খাওয়ানো শুধু অন্যদের জন্য উপকারী নয়, এটি নিজেও রোজার পূর্ণতা ও সঠিকভাবে রোজা রাখার একটি অংশ। রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি ইফতার করেছে, সে তার রোজার ফল পেয়েছে এবং আল্লাহ তায়ালা তার রোজা পূর্ণ করেছেন।” (বুখারি)

ইফতার খাওয়ানোর মাধ্যমে একজন মুসলিম নিজের রোজা শেষ করতে সহায়তা করে এবং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক। ইফতার খাওয়ানোর আরও কিছু গভীর ফজিলত এবং তাৎপর্য রয়েছে যা ইসলামের শিক্ষা এবং সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এই ফজিলতগুলো কেবল ইফতার খাওয়ানোর তাৎপর্যই নয়। বরং এটি মুসলিম সমাজের ঐক্য, দানশীলতা, এবং আল্লাহর নিকট সাফল্য লাভের একটি মাধ্যম।

৬. একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও সহযোগিতা

রমজান মাসে, উপবাসী মুসলিমদের জন্য ইফতার করানো সহানুভূতি এবং ভালোবাসা বাড়ানোর এক শক্তিশালী উপায়। এটি শুধু একটি ব্যক্তি বা পরিবারকে সাহায্য করার বিষয় নয়।

বরং গোটা মুসলিম সম্প্রদায়কে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতামূলক করতে সহায়ক। রাসূল (সা.) ইফতার করানোকে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ করেছেন যে, এটি সমাজের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ককে আরও দৃঢ় ও মজবুত করে।

৭. আল্লাহর অনুগ্রহ ও ক্ষমা লাভ

রমজান মাস আল্লাহর বিশেষ রহমত ও ক্ষমার সময়। এই মাসে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি আরও বেশি কৃপা ও ক্ষমা প্রদর্শন করেন। ইফতার খাওয়ানো বা রোজাদারদের সাহায্য করা এই মাসের মধ্যে আল্লাহর কাছে আরও বেশি নেয়ামত পাওয়ার একটি উপায়।

রাসূল (সা.) বলেছেনঃরমজান মাসে, সৎ কর্মের সওয়াব অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি।” (মুসলিম)। যে ব্যক্তি ইফতার খাওয়াবে, আল্লাহ তার সওয়াবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন।

৮. দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি

ইফতার খাওয়ানো একটি দান এবং সৎ কাজ হওয়ার কারণে, এটি দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি এবং সফলতা এনে দেয়। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, দান করা কেবল আত্মিক শান্তি নয়,

এটি দুনিয়া ও আখিরাতে একজন মুসলিমের জন্য সুখের কারণ। যখন আপনি অন্যকে সাহায্য করেন, তখন আল্লাহ আপনাকে সেই শান্তি এবং সুখ প্রদান করেন।

৯. পরিবার ও সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন

ইফতার খাওয়ানোর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার পরিবার, বন্ধু এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে এক সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। বিশেষ করে বাবা-মা বা অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শেখাতে পারেন যে, দান এবং সাহায্য করা একটি মহান কাজ এবং আল্লাহর নিকট এর বিশেষ মূল্য রয়েছে।

১০. আল্লাহর কাছে দোয়ার সুযোগ

ইফতার খাওয়ানোর সময় রোজাদারদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করার একটি বিশেষ মুহূর্ত আসে। রাসূল (সা.) বলেছেনঃরোজাদার ব্যক্তির দোয়া কখনোই বৃথা যায় না, বিশেষ করে ইফতার করার সময়।

(ইবনে মাজাহ) তাহলে, ইফতার করানোর মাধ্যমে আপনি শুধু অন্যকে সাহায্য করছেন না. বরং সেই রোজাদারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে দোয়া গ্রহণের সুযোগও পাচ্ছেন।

১১. আল্লাহর রহমত এবং রোজা পূর্ণতা

ইফতার খাওয়ানোর মাধ্যমে আপনি আল্লাহর রহমত লাভ করেন। রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ কৃপা ও দয়া প্রকাশ করেন, এবং যারা রোজা রাখা এবং অন্যান্য সৎ কাজ করছে, তাদের জন্য ইফতার খাওয়ানো একটি বিশেষ ফজিলত।

রাসূল (সা.) বলেনঃ “যে ব্যক্তি ইফতার করাবে, তার রোজার পূর্ণতা আল্লাহ নিশ্চিত করবেন এবং তাকে পুরস্কৃত করবেন।” (বুখারি) এতে বোঝানো হচ্ছে যে, ইফতার খাওয়ানো রোজার পূর্ণতা নিশ্চিত করে, এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার জন্য সৎ কাজের পূর্ণ সওয়াব প্রদান করেন।

১২. আত্মবিশ্বাস এবং অঙ্গীকার

ইফতার খাওয়ানোর মাধ্যমে একজন মুসলিম শুধু অন্যকে সাহায্য করছে না, নিজের মধ্যে একটি শক্তিশালী আত্মবিশ্বাস এবং কর্তব্যবোধের জন্ম দেয়। এটি ব্যক্তি এবং সমাজের উন্নতির জন্য সহায়ক।

রমজান মাসের বিশেষ সময়ে, যখন সবাই উপবাস থাকে, তখন ইফতার খাওয়ানোর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে পারে এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে দৃঢ়ভাবে অবিচল থাকে।

১৩. দিনব্যাপী রোজার পরিশোধ

ইফতার খাওয়ানো শুধু অন্যকে সহায়তা করা নয়, এটি নিজেকে মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে এবং আধ্যাত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ করার এক উপায়ও।

রোজা রাখার পর, যখন আপনি অন্যদের ইফতার করান, তখন আপনি তাদের কষ্ট এবং ত্যাগের অনুভূতি শেয়ার করেন এবং এটিই একধরনের আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতা তৈরি করে।

১৪. পরকালে বিশেষ মর্যাদা

ইফতার খাওয়ানোর মাধ্যমে মুসলিমরা পরকালে বিশেষ মর্যাদা লাভ করবে। এটি তাদের পরকালীন জীবনকেও সুন্দর করবে। ইসলামে, এই কাজের জন্য বিশেষ পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার জন্য দান করবে, তাকে আমি বিশেষ পুরস্কার দেব।” (সূরা বাকারা)

১৫. ছোট কাজ, বড় সওয়াব

অনেকে মনে করেন, ইফতার খাওয়ানো একটি বড় দান, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এটি একটি ছোট কাজ, কিন্তু এর সওয়াব অত্যন্ত বড়। এমনকি একটি খেজুর বা এক কাপ পানি দিয়ে ইফতার করানোও অনেক সওয়াব অর্জন করতে পারে।

রাসূল (সা.) বলেনঃযে ব্যক্তি এক কাপ পানি বা এক খেজুর দিয়ে রোজাদারকে ইফতার করায়, তাকে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের একটি বাড়ি তৈরি করবেন।” (বুখারি)

১৬. দানশীলতা ও সমাজের উন্নতি

ইফতার খাওয়ানো সামাজিক সেবার অংশ। এতে, সমাজের দরিদ্র, অসহায় এবং বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো হয়। এটি আমাদেরকে শুধুমাত্র নিজেদের জন্য নয়,

বরং আমাদের সমাজের জন্যও চিন্তা করতে শেখায়। রমজান মাসে ইফতার খাওয়ানোকে দানশীলতার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়, যা সমাজের মধ্যে ভালোর প্রচার করে।

আরও পড়ুনঃ রোজার নিয়ত কখন করতে হয়

১৭. পরিবারের মধ্যে একতা ও ভালোবাসা

রমজান মাসে, ইফতার খাওয়ানো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করে। পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে ইফতার করলে তাদের মধ্যে মাধুর্য ও একতা বৃদ্ধি পায়। এটা মুসলিম পরিবারগুলোকে আরও সজীব এবং ঐক্যবদ্ধ রাখে।

১৮. সর্বোচ্চ মর্যাদার কাজ

ইফতার খাওয়ানো আল্লাহর জন্য এক নেক কাজ হিসেবে গণ্য হয়। এবং এটি এমন একটি কাজ যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক। আল্লাহ তায়ালা এমন সৎ কাজগুলোকে অত্যন্ত ভালোবাসেন, যা তাঁর পথে মানুষের সহায়তার উদ্দেশ্যে করা হয়।

শেষ কথা

ইফতার খাওয়ানোর ফজিলত শুধু রোজাদারদের উপকারে আসে না। বরং এটি দানশীলতা, মানবিকতা, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির একটি বড় মাধ্যম। এটি শুধু ইফতার করানো নয়।

বরং এটি মুসলিম সমাজের মধ্যে একতা, সহযোগিতা এবং পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি করে। রাসূল (সা.) এর শিক্ষাগুলো মেনে চললে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি এবং আমাদের আখিরাতও সুন্দর হয়ে ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button