যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য কি
ইসলামে দান-সদকার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে, যা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যাকাত ও ফিতরা মুসলমানদের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ইবাদত, যা দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হয়।যদিও উভয়ই দান হিসেবে গণ্য হয়, তবুও যাকাত ও ফিতরার মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। যাকাত ধনীদের বার্ষিক সম্পদ থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিবদের মাঝে বিতরণের ব্যবস্থা, আর ফিতরা রমজান মাসের শেষে ঈদের আগে গরিবদের জন্য দেওয়া একটি বিশেষ দান।
এ দুটি দানের উদ্দেশ্য ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকায় এগুলোর গুরুত্ব ও কার্যকারিতা ভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয়।
যাকাত কি?
যাকাত হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ গরিব ও প্রয়োজনমাফিক ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা বাধ্যতামূলক। এর উদ্দেশ্য হল সম্পদের পবিত্রতা, সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা এবং গরিবদের সাহায্য করা।
ফিতরা কি?
ফিতরা (ফিতর) হল রমজান মাসের শেষে ঈদুল ফিতরের আগে গরিব ও অসহায় মানুষদের দেওয়া একটি সদকা। এর উদ্দেশ্য হল রমজানের রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণ করা এবং ঈদের দিন গরিবদেরও আনন্দে শরিক করা।
যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য কি?
নিচে যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
১. সময়
যাকাত
যাকাত প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট সময় নেই। বছরের যে কোনো সময় যাকাত দেওয়া যায়, তবে যখন কারো সম্পদ নিসাব পরিমাণে পৌঁছায় এবং এক বছর অতিক্রম করে, তখন যাকাত দেওয়া বাধ্যতামূলক।
ফিতরা
ফিতরা শুধুমাত্র রমজান মাসের শেষে এবং ঈদুল ফিতরের আগে দেওয়া হয়। সাধারণত ঈদের নামাজের আগেই ফিতরা দেওয়া উত্তম।
২. প্রদানের শর্ত
যাকাত
যাকাত দেওয়ার জন্য সম্পদ নিসাব পরিমাণে পৌঁছানো এবং এক বছর ধরে সেই সম্পদ থাকা শর্ত। শুধুমাত্র সোনা, রুপা, নগদ টাকা, ব্যবসায়িক পণ্য, পশু ইত্যাদি সম্পদের উপর যাকাত দেওয়া হয়।
ফিতরা
ফিতরা দেওয়ার জন্য সম্পদ নিসাব পরিমাণে পৌঁছানোর শর্ত নেই। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, শিশু-বৃদ্ধ সবার জন্য ফিতরা দেওয়া বাধ্যতামূলক (অবশ্য শিশু ও অসহায়দের ফিতরা তাদের অভিভাবকদের দেওয়া হয়)।
৩. পরিমাণ
যাকাত
যাকাতের পরিমাণ সম্পদের ধরনের উপর নির্ভর করে। সাধারণত নগদ টাকা, সোনা, রুপা এবং ব্যবসায়িক পণ্যের উপর ২.৫% হারে যাকাত দেওয়া হয়।
ফিতরা
ফিতরার পরিমাণ নির্দিষ্ট। এটি সাধারণত গম, যব, খেজুর বা কিসমতের মতো প্রধান খাদ্যশস্যের পরিমাণ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। বর্তমানে ফিতরার পরিমাণ নগদ টাকায়ও দেওয়া হয়, যা স্থানীয় বাজারের মূল্য অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
৪. গ্রহীতার ধরন
যাকাত
যাকাত শুধুমাত্র নির্দিষ্ট শ্রেণির লোকদের দেওয়া যায়, যেমনঃ গরিব, মিসকিন, ঋণগ্রস্ত, মুসাফির ইত্যাদি। নিকটাত্মীয়দের মধ্যে যারা যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত, তাদেরও দেওয়া যায়।
ফিতরা
ফিতরা শুধুমাত্র গরিব ও অসহায় লোকদের দেওয়া হয়, যারা যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত।
আরও পড়ুনঃ ফিতরা কত টাকা ২০২৫
৫. আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
যাকাত
যাকাত সম্পদের পবিত্রতা ও বৃদ্ধি সাধন করে এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।
ফিতরা
ফিতরা রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণ করে এবং ঈদের দিন সবাইকে আনন্দে শরিক করে।
শেষ কথা
যাকাত ও ফিতরা উভয়ই ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, তবে এদের উদ্দেশ্য, সময়, শর্ত ও পরিমাণে পার্থক্য রয়েছে। যাকাত সম্পদশালীদের জন্য বাধ্যতামূলক, অন্যদিকে ফিতরা সব মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক।