কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ
ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম। এটি মুসলমানদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক আর্থিক ইবাদত, যা সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ইসলামী শরীয়ত অনুসারে, যদি কোনো মুসলমান নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন এবং সেই সম্পদ এক বছর পর্যন্ত তার কাছে থাকে, তবে তার উপর যাকাত ফরজ হয়। যাকাত শুধু দান বা দুঃস্থদের সহায়তা নয়।বরং এটি সম্পদের পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। তবে সব ধরনের সম্পদের উপর যাকাত ফরজ নয়। নির্দিষ্ট কিছু সম্পদের উপরই যাকাত দিতে হয়। ইসলামী বিধান অনুযায়ী স্বর্ণ-রৌপ্য, নগদ অর্থ, ব্যবসায়িক পণ্য, গবাদিপশু, শেয়ার ও বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয়।
সমাজে ধনী-গরিবের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি করাই যাকাতের মূল উদ্দেশ্য। তাই যাদের উপর যাকাত ফরজ, তাদের এটি যথাযথভাবে আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ?
যাকাত মূলত নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে ফরজ হয়। যেসব সম্পদের উপর যাকাত ফরজ তা হলোঃ
১. স্বর্ণ ও রৌপ্য
যদি কারও কাছে ৭.৫ তোলা (৮৭.৫ গ্রাম) স্বর্ণ বা ৫২.৫ তোলা (৬১২.৩৬ গ্রাম) রৌপ্য থাকে, তবে তার উপর যাকাত ফরজ। স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলংকার থাকলেও যাকাত দিতে হবে।
২. নগদ অর্থ ও ব্যাংক ব্যালেন্স
যদি কারও কাছে নিসাব পরিমাণ (৫২.৫ তোলা রৌপ্যের সমমূল্যের) নগদ টাকা, ব্যাংক ডিপোজিট বা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যালেন্স থাকে, তবে যাকাত ফরজ।
৩. ব্যবসার মালামাল
ব্যবসার জন্য সংরক্ষিত মালামালের বাজারমূল্যের উপর যাকাত দিতে হয়।
৪. শেয়ার, বন্ড ও সঞ্চয়পত্র
বিনিয়োগযোগ্য শেয়ারের বাজারমূল্যের উপর যাকাত দিতে হয় (যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে কেনা হয়)। সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের মূলধনের উপরও যাকাত ফরজ (লভ্যাংশসহ হিসাব করে)।
৫. প্রাপ্ত ঋণ (উসুলযোগ্য ঋণ)
যদি কারও কাছে এমন ঋণ থাকে যা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, তবে সেটার উপরও যাকাত দিতে হবে।
৬. গবাদিপশু (গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট)
নির্দিষ্ট সংখ্যক পশুর মালিক হলে যাকাত ফরজ (যেমনঃ ৩০টি গরুর উপর ১টি এক বছরের বাছুর যাকাত দিতে হয়)।
৭. খামারের উৎপাদিত পণ্য ও কৃষিজ ফসল
কৃষিজ উৎপাদনের উপর উশর (১০% বা ৫%) দিতে হয়, তবে এটি যাকাতের অংশ হিসেবে ধরা হয় না।
যাকাতের হার সাধারণত ২.৫% (১/৪০ অংশ) নির্ধারিত সম্পদের উপর প্রযোজ্য হয়, তবে কৃষিজ পণ্যের ক্ষেত্রে হার আলাদা।