যাকাত দেওয়ার নিয়ম
যাকাত হল ইসলামের একটি ফরজ আর্থিক ইবাদত। যা মুসলমানদের উপর তাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদের একটি অংশ দান করা ফরজ।এটি সমাজে দারিদ্র্য দূর করতে, অসহায়দের সাহায্য করতে এবং সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। যাকাতের মাধ্যমে দরিদ্র ও অস্থির জীবনযাপন করা মানুষের জন্য সহায়তা প্রদান করা হয়।
যাকাতের মূল উদ্দেশ্য?
দারিদ্র্য দূরীকরণ
যাকাতের মাধ্যমে দরিদ্রদের সহায়তা করা হয়, যাতে তারা জীবনযাপন করতে পারে।
সম্পদের সুষম বণ্টন
যাকাত সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে এবং সমাজে আর্থিক বৈষম্য কমাতে সাহায্য করে।
ঈমানি পরিশুদ্ধি
যাকাতের মাধ্যমে একজন মুসলমান তার সম্পদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করেন এবং ঈমানের পরিশুদ্ধি ঘটে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
যাকাত প্রদান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি উপায়।
যাকাতের হার
যাকাত আদায়ের হার ২.৫% (একশো টাকার মধ্যে ২.৫ টাকা)। এটি সাধারণত এক বছরের জন্য সম্পদের উপর নির্ধারিত হয়।
যাকাত দেওয়ার নিয়ম?
যাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ইবাদত, যা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে প্রদান করা ফরজ। নিচে যাকাত দেওয়ার নিয়ম বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলোঃ
১. যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তসমূহ
যাকাত ফরজ হতে হলে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ হতে হবেঃ
মুসলিম হওয়া
যাকাত শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য ফরজ।
বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) হওয়া
প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর যাকাত ফরজ হয়।
আক্লবান (সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন) হওয়া
মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরজ নয়।
নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া
- স্বর্ণের ক্ষেত্রে ৭.৫ ভরি (৮৭.৫ গ্রাম) বা
- রূপার ক্ষেত্রে ৫২.৫ ভরি (৬১২.৩৫ গ্রাম) অথবা
- সমপরিমাণ সম্পদ (নগদ টাকা, ব্যাংক ব্যালেন্স, বাণিজ্যিক পণ্য ইত্যাদি)।
এক চন্দ্র বছর অতিক্রম করা
নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর ধরে মালিকানায় থাকলে যাকাত ফরজ হয়।
ঋণমুক্ত হওয়া
যদি কারও ঋণ নিসাব পরিমাণ সম্পদের সমান বা তার বেশি হয়, তবে তার যাকাত ফরজ নয়।
২. যাকাতের হার
সম্পদের উপর ২.৫% (১/৪০ অংশ) হারে যাকাত আদায় করতে হয়।
৩. যেসব সম্পদের উপর যাকাত ফরজ
নগদ টাকা ও সঞ্চয়
ব্যাংকে বা হাতে থাকা অর্থের ওপর যাকাত ফরজ।
স্বর্ণ ও রূপা
অলংকার হিসেবে থাকলেও যাকাত দিতে হবে।
ব্যবসার পণ্য
ব্যবসার জন্য ক্রয় করা পণ্যের বাজারমূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে।
বিনিয়োগ ও শেয়ার
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ক্রয় করা শেয়ারের বাজারমূল্যের উপর যাকাত ফরজ।
ভাড়া থেকে পাওয়া আয়
জমি, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদির ভাড়ার উপর যাকাত দিতে হবে (যদি তা নিসাব পরিমাণ হয়)।
৪. যাকাত দেওয়ার পদ্ধতি
- প্রথমে নিজের মোট সম্পদ হিসাব করুন।
- তার থেকে প্রযোজ্য ঋণ ও প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিন।
- নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার ২.৫% নির্ধারণ করুন।
- যাদের দেওয়া যাবে তাদের মধ্যে বিতরণ করুন।
৫. যাকাত দেওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি
কুরআনের সূরা আত-তওবার (৯:৬০) আয়াত অনুযায়ী, যাকাত নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের দেওয়া যাবেঃ
ফকির
যারা অতিরিক্ত সম্পদহীন, বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট উপার্জন করতে পারে না।
মিসকিন
যারা অত্যন্ত দরিদ্র, অর্থ-সাহায্যের অভাবে কষ্টে আছে।
যাকাত সংগ্রহকারী
যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণে নিযুক্ত ব্যক্তি।
নতুন মুসলিম
যারা ইসলামে নতুন প্রবেশ করেছে এবং আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
যারা বৈধ কারণে ঋণে জর্জরিত।
আল্লাহর পথে ব্যয়
দ্বীন প্রচার, জিহাদ বা ইসলামের কল্যাণে ব্যয়।
মুসাফির
যারা ভ্রমণে নিঃস্ব হয়ে গেছে।
৬. যাকাত দেওয়ার সময়
একবার নিসাব পরিমাণ সম্পদ জমা হওয়ার পর এক চন্দ্র বছর (হিজরি বছর) পূর্ণ হলে যাকাত দিতে হবে। রমজান মাসে যাকাত দেওয়া উত্তম, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।