ইসলাম

কোন কোন ফসলের যাকাত দিতে হবে

ইসলামে যাকাত কেবলমাত্র সম্পদ বা অর্থের ক্ষেত্রেই নয়। বরং কৃষিজ উৎপাদনের ওপরও প্রযোজ্য। তবে সব ধরনের ফসলের ওপর যাকাত ফরজ নয়।কোন কোন ফসলের যাকাত দিতে হবেযাকাতযোগ্য ফসলের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে, যেমনঃ সেটি মানুষের মৌলিক খাদ্য হতে হবে, দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য হতে হবে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উৎপাদিত হতে হবে।

কোন কোন ফসলের যাকাত দিতে হবে?

কিছু নির্দিষ্ট ফসলের ওপর যাকাত ফরজ, বিশেষ করে যেগুলো খাদ্যশস্য বা সংরক্ষণযোগ্য শস্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিচে সেগুলোর তালিকা দেওয়া হলোঃ

১. প্রধান খাদ্যশস্য

এসব ফসল মানুষের মৌলিক খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণযোগ্যঃ

ধান (চাল), গম, যব, ও ভুট্টা

এসব শস্যের ওপর যাকাত ফরজ, কারণ এগুলো খাদ্য হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

২. ফলমূল যা শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়

খেজুর ও কিসমিস

শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায় এবং মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আঙুর

এটি কিসমিসে রূপান্তরিত হয়ে দীর্ঘ সময় সংরক্ষণযোগ্য হয়, তাই এর ওপরও যাকাত দিতে হয়।

জয়তুন

এটি তেল উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং সংরক্ষণযোগ্য, তাই এর ওপরও যাকাত দিতে হয়।

৩. শস্য ও ডালজাতীয় খাদ্যশস্য

মসুর ডাল, ছোলা, বুট, মটরশুঁটি, সিমের দানা ইত্যাদি সংরক্ষণযোগ্য এবং মৌলিক খাদ্য উপাদান হওয়ায় এসব ফসলের ওপরও যাকাত ফরজ।

যাকাত প্রদানের হার?

যাকাতের হার নির্ভর করে জমিতে ব্যবহৃত পানির উৎসের ওপর। ইসলামে দুই ধরনের হার নির্ধারণ করা হয়েছেঃ

১. যদি জমি প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টির পানি, নদী বা ঝরনার পানির মাধ্যমে সেচ পায়ঃ

তখন ফসলের ১০% (১/১০ অংশ) যাকাত দিতে হবে।

২. যদি জমিতে কৃত্রিম উপায়ে যেমনঃ নলকূপ, পাম্প, কূপ বা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়ঃ

তখন ফসলের ৫% (১/২০ অংশ) যাকাত দিতে হবে।

এর কারণ হলো, প্রাকৃতিক পানির ক্ষেত্রে কৃষকের খরচ কম হয়, তাই যাকাতের হার বেশি রাখা হয়েছে। কিন্তু কৃত্রিমভাবে পানি সরবরাহ করলে কৃষকের খরচ বেশি হয়, তাই যাকাতের হার কম রাখা হয়েছে।

নিসাব (সর্বনিম্ন পরিমাণ)

  • কোনো ফসলের ওপর যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ উৎপাদিত হতে হয়, যাকে নিসাব বলে।
  • ফসলের নিসাব হলো ৬১২ কেজি বা প্রায় ২০ মণ।
  • যদি কারও উৎপাদন এই পরিমাণের বেশি হয়, তাহলে তিনি যাকাত দিতে বাধ্য।

যদি এর কম হয়, তাহলে তার ওপর যাকাত ফরজ নয়।

যাকাত দেওয়ার সময়?

ফসল ঘরে তোলার পরই যাকাত প্রদান করতে হবে। অন্য সম্পদের মতো এক বছর অপেক্ষা করার দরকার নেই।

আরও পড়ুনঃ যাকাত কাকে বলে | যাকাত কত প্রকার ও কি কি

যেসব ফসলের যাকাত নেই?

নিম্নলিখিত ফসলের ওপর যাকাত ফরজ নয়ঃ

সবজি

যেমনঃ আলু, টমেটো, শাকসবজি, লাউ, বেগুন ইত্যাদি, কারণ এগুলো দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণযোগ্য নয়।

ফলমূল

যেমনঃ আম, কলা, পেয়ারা, লিচু, কমলা ইত্যাদি (শুধুমাত্র যদি এগুলো সংরক্ষণযোগ্য বা শুকিয়ে ব্যবহার করা যায়, তাহলে যাকাত প্রযোজ্য হতে পারে)।

গোল আলু ও আদা

কারণ এগুলো সংরক্ষণযোগ্য হলেও মৌলিক খাদ্য হিসেবে গণ্য হয় না।

শেষ কথা

যাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের একটি ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা তৈরি করে। ফসল উৎপাদনকারী কৃষকরা যদি উপরের শর্ত পূরণ করে, তাহলে তাদের জন্য যাকাত প্রদান ফরজ।

ইসলামের এই নিয়মগুলো অনুসরণ করলে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা হয় এবং দরিদ্রদের সহায়তা করা সহজ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button