ইসলাম

ইতেকাফে বসার নিয়ম

ইসলামে ইবাদতের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অনেক পথ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ইতিকাফ। ইতিকাফ শব্দের অর্থ হলো কোনো নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা ও নিজেকে আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত রাখা।ইতেকাফে বসার নিয়মএটি একটি মহৎ ইবাদত, যা মানুষের আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য ও আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়। বিশেষ করে রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ করা সুন্নত, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত পালন করতেন।

ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াবি ব্যস্ততা থেকে দূরে সরে থেকে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সময় ব্যয় করে। এটি আত্মশুদ্ধির একটি বিশেষ সুযোগ, যা একজন মুমিনকে আল্লাহর প্রতি আরও নিবেদিত করে তোলে।

ইতিকাফ শব্দের অর্থ কি?

ইতিকাফ শব্দটি আরবি “عكف” (আ’কাফা) থেকে এসেছে। যার অর্থ কোনো কিছুর সাথে একাগ্রচিত্তে লেগে থাকা বা নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা।

ইতিকাফ কি?

ইসলামী পরিভাষায় ইতিকাফ বলতে রমজানের শেষ দশ দিনে বা অন্য সময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে বোঝানো হয়।

ইতিকাফের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব?

১. আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন থাকা

ইতিকাফকারী নিজেকে দুনিয়াবি কাজ থেকে দূরে রেখে ইবাদত ও আল্লাহর স্মরণে ব্যস্ত থাকেন।

২. লাইলাতুল কদর লাভের সুযোগ

রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ করলে শবে কদর পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৩. নবী (সা.) এর সুন্নাত

রাসুলুল্লাহ (সা.) আজীবন রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন এবং সাহাবিদেরও উৎসাহিত করেছেন।

ইতিকাফের ধরন?

১. ওয়াজিব ইতিকাফ

মানত (নিয়ত) করলে তা পালন করা আবশ্যক।

২. সুন্নত ইতিকাফ

রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ।

৩. নফল ইতিকাফ

যে কোনো সময় ইবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদে থাকা।

ইতেকাফে বসার নিয়ম?

  • পুরুষদের জন্য মসজিদে থাকা জরুরি।
  • নারীরা বাড়ির নির্দিষ্ট কক্ষে ইতিকাফ করতে পারেন।
  • ইতিকাফকারী কেবল জরুরি কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারেন। (যেমনঃ ওজু, গোসল, প্রয়োজনীয় খাবার নেওয়া)।
  • ইতিকাফ আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম মাধ্যম।

ইতিকাফের স্থান?

১. পুরুষদের জন্য

মসজিদে থাকতে হবে, যেখানে জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয়।

২. নারীদের জন্য

ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে ইতিকাফ করার অনুমতি আছে (যদি সেখানে নিয়মিত নামাজ পড়ার স্থান নির্ধারিত থাকে)।

ইতিকাফ শুরুর নিয়ম?

  • ইতিকাফ শুরু করার আগে নিয়ত করা আবশ্যক (হৃদয়ে বা মুখে বলতে পারেনঃ “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইতিকাফ করছি।”)
  • ইতিকাফের জন্য পবিত্রতা বজায় রাখা জরুরি ওজু, গোসল, পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা উত্তম।
  • ইতিকাফের জন্য কোনো নির্দিষ্ট দোয়া নেই, তবে ভালো কাজের ইচ্ছা থাকা দরকার।

ইতিকাফে করণীয় কাজ?

  • নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়া (পুরুষদের জন্য)।
  • কুরআন তিলাওয়াত ও তাফসির পাঠ করা।
  • দোয়া, জিকির ও ইস্তিগফার করা।
  • নফল নামাজ পড়া।
  • রাসুল (সা.) এর হাদিস অধ্যয়ন করা।
  • শবে কদর তালাশ করা ও বেশি দোয়া করা।

ইতিকাফের সময় যে কাজগুলো এড়িয়ে চলতে হবে?

  • অনর্থক কথা বলা বা তর্ক করা।
  • অপচয় বা অহেতুক সময় নষ্ট করা।
  • গীবত, পরনিন্দা বা মিথ্যা বলা।
  • অযথা হাসাহাসি ও বিনোদনমূলক কাজে লিপ্ত হওয়া।
  • মসজিদ থেকে অনাবশ্যক বের হওয়া (শুধু জরুরি প্রয়োজনে যেমনঃ ওজু, গোসল, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহের জন্য বের হওয়া যাবে)।

ইতিকাফ শেষ করার নিয়ম?

  • শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার পর ইতিকাফ শেষ হয়।
  • শেষ রাতে বিদায়ী দোয়া করা উত্তম।
  • মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় সুন্নতি দোয়া পড়ে বের হওয়া উচিত।

শেষ কথা

ইতিকাফ আত্মশুদ্ধির একটি অন্যতম সুযোগ, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। এটি সঠিকভাবে পালন করলে একজন মুসলমানের ঈমান মজবুত হয় এবং আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের আশা করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button