কাফফারা কখন দিতে হয়
ইসলামে কাফফারা হলো নির্দিষ্ট কিছু বিধান লঙ্ঘনের পরিবর্তে প্রদান করা একটি ধর্মীয় ক্ষতিপূরণ বা শাস্তি। যা ব্যক্তিকে তার কৃত ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দেয়। এটি মূলত ইসলামী আইন ও নৈতিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।যা মানুষের দায়িত্বশীলতা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নির্ধারিত। কাফফারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দিতে হয়, যেমনঃ ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করা, কসম ভঙ্গ করা, স্ত্রীকে জিহারের মাধ্যমে হারাম করে ফেলা, হজের কিছু বিধি লঙ্ঘন করা ইত্যাদি।
কাফফারা প্রদানের উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, গুনাহের কাফফারাস্বরূপ শাস্তি প্রদান করা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।
কাফফারা কখন দিতে হয়?
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে (বিনা ওজরে) রমজানের রোজা ভেঙে ফেলে, বিশেষ করে খাওয়া, পান করা বা সহবাস করার মাধ্যমে, তাহলে তাকে কাফফারা দিতে হবে।
রোজার কাফফারা আদায়ের নিয়ম?
রোজার কাফফারা আদায়ের জন্য তিনটি বিকল্প রয়েছে, ধাপে ধাপে প্রয়োগ করতে হয়ঃ
১. একটানা ৬০ দিন রোজা রাখা
যদি কেউ রমজানের রোজা ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলে, তবে তার জন্য একটানা ৬০ দিন রোজা রাখা ফরজ। যদি কোনো কারণে এই ৬০ দিন একটানা রাখা সম্ভব না হয় (বিশেষ ওজর ছাড়া), তাহলে নিচের দ্বিতীয় বিকল্প গ্রহণ করতে হবে।
২. ৬০ জন দরিদ্রকে খাবার খাওয়ানো
যদি কেউ একটানা ৬০ দিন রোজা রাখতে না পারে (যেমন, শারীরিকভাবে অক্ষম), তাহলে তাকে ৬০ জন দরিদ্র ব্যক্তিকে পূর্ণ খাবার খাওয়াতে হবে। প্রতি ব্যক্তির জন্য আধা সা‘ (প্রায় দেড় কেজি) গম বা খাদ্যদানও করা যায়।
৩. একজন ক্রীতদাস মুক্ত করা (বর্তমানে প্রযোজ্য নয়)
ইসলামের প্রথম যুগে রোজার কাফফারার প্রথম বিকল্প ছিল একজন ক্রীতদাস মুক্ত করা। যেহেতু এখন দাস প্রথা নেই, তাই এটি বাস্তবে প্রযোজ্য নয়।
৪. কসম ভঙ্গের কাফফারা
যদি কেউ আল্লাহর নামে কসম করে এবং তা ভেঙে ফেলে, তবে কাফফারা দিতে হয়ঃ
- ১০ জন দরিদ্রকে খাওয়ানো বা পোশাক দেওয়া, যদি না পারেন তবে
- তিন দিন রোজা রাখা
৫. হজ্জের সময় নিয়ম লঙ্ঘনের কাফফারা
হজের নির্দিষ্ট বিধান লঙ্ঘন করলে (যেমনঃ ইহরামের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করা), তখন কাফফারা দিতে হয়, যা হতে পারেঃ
- পশু কোরবানি
- গরিবদের খাওয়ানো
- বিকল্প কিছু রোজা রাখা
৬. জিহার (স্ত্রীকে মা-এর মতো বলা) এর কাফফারা
যদি কোনো ব্যক্তি স্ত্রীর সাথে এই বলে সম্পর্ক ছিন্ন করে যে, “তুমি আমার মা-এর মতো”, তবে স্ত্রীকে স্পর্শ করার আগে কাফফারা দিতে হবেঃ
- একজন ক্রীতদাস মুক্ত করা, যদি না পারেন তবে
- একটানা ৬০ দিন রোজা রাখা, যদি না পারেন তবে
- ৬০ জন দরিদ্রকে খাওয়ানো
৭. কসম ভঙ্গের কাফফারা
যদি কেউ আল্লাহর নামে কসম করে এবং তা ভেঙে ফেলে, তবে কাফফারা দিতে হয়ঃ ১০ জন দরিদ্রকে খাওয়ানো বা পোশাক দেওয়া, যদি না পারেন তবে তিন দিন রোজা রাখা।
আরও পড়ুনঃ ইতেকাফে বসার নিয়ম
যদি ভুলবশত রোজা ভেঙে যায়?
যদি কেউ ভুলবশত বা ভুল করে (যেমনঃ পানি পান করার পর মনে পড়ল যে সে রোজা ছিল) তাহলে কাফফারা দিতে হবে না, বরং সেই দিনের রোজা পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেললে তাওবা করা ও কাফফারা আদায় করা জরুরি।
কোন পরিস্থিতিতে কাফফারা দিতে হবে না?
অসুস্থতা বা অন্য কোনো বৈধ ওজরের কারণে রোজা ভাঙলে শুধু কাজা করতে হবে, কাফফারা নয়। মহিলাদের মাসিক ও প্রসূতি অবস্থায় রোজা ভাঙলে কাফফারা নয়, শুধু পরে কাজা করতে হবে।