সারাদেশ

চুল রং করার ক্ষতিকর দিক, জেনে নিন বিস্তারিত

অনেকেই ফ্যাশনের সাথে তাল মেলাতে বা চুল সাদা হয়ে গেলে রং করেন। চুল রং করলে কিছু সময় পর পুনরায় রং করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই হেয়ার কালারগুলোর বেশিরভাগে এমন কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে, যা চুলের পাশাপাশি স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, হেয়ার স্টাইলিংয়ের বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

চুল রং করার ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান

হেয়ার কালারে উপস্থিত ডায়ামিনোসেল সালফেটপ্যারা-ফেনিলেনডায়ামাইন (পিপিডি) হলো দুট প্রধান রাসায়নিক, যা শরীরে ক্যানসারের কোষ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। এই উপাদানগুলো হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করার পাশাপাশি হাঁপানি ও অ্যালার্জির মতো শারীরিক সমস্যার কারণও হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ

এছাড়াও, যারা নিয়মিত চুল রং করেন, তাদের ত্বকে অ্যালার্জি, র‍্যাশ, চুলকানি, ফুলে যাওয়া ও খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে। চুলের জন্য ক্ষতিকর উপাদান অ্যামোনিয়া চুলের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট করে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক করে ফেলে, ফলে চুল পড়া বেড়ে যায়।

দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্ভাবনা

চুলের রং বারবার ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকের স্বাভাবিক লিপিড স্তর ধ্বংস হয়, ফলে চুলের গোড়া থেকে ময়েশ্চার হারিয়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে এই রঙে থাকা পিপিডি ও লেডের মতো উপাদান চুলের গোড়ায় জমা হয়ে তা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এই রাসায়নিকগুলোর প্রভাব গর্ভপাতের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের চুলের রং ও তাদের ক্ষতি

চুলের রংকে সাধারণত তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায়:

অস্থায়ী রং: এই ধরনের রং খুব দ্রুত উঠে যায়, একবার শ্যাম্পু করলেই রঙের প্রভাব চলে যায়। তবে নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের ক্ষতি হতে পারে।

আধা-স্থায়ী রং: এ ধরনের রং ৮-১২ বার শ্যাম্পু করার পর ধীরে ধীরে উঠে যায়। তবে নিয়মিত ব্যবহারে চুলের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

স্থায়ী রং: চুলে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে এবং এটি চুলের জন্য সচয়ে ক্ষতিকর এর মধ্যে থাকা অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড চুলের গোড়ায় জমা হয়ে চুলের পাশাপাশি ত্বকের ক্ষতিও করে থাকে।

    উপাদানের ভিত্তিতে রংয়ের প্রভাব

    কেমিক্যাল রং: এই ধরনের রং দীর্ঘদিন ব্যবহারে চুল ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। বাজারে এর দাম সাধারণত বেশি।

    সিনথেটিক রং: সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পাওয়া এই রংগুলোও চুল ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

    চুল রং করার বিকল্প

    চুলে রং না করার পরামর্শই দেন বিশেষজ্ঞরা। বরং চুলে খাঁটি নারকেল তেল, শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারের ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়। চুল সাদা হয়ে গেলে রং করার প্রয়োজন হলে, কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন, ৬ শতাংশের কম পিপিডি আছে এমন রং ব্যবহার করা, চুলে রং করার আগে কন্ডিশনার ব্যবহার করা এবং চুল রং করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

    লেখক: ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, ত্বক-চর্ম-যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Back to top button