অর্থনীতি

৫০০ টাকার নোট কবে চালু হয়

বাংলাদেশে ৫০০ টাকার নোট প্রথম চালু হয় ১৯৯৭ সালে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে। এটি উচ্চমূল্যের ব্যাংকনোটগুলোর মধ্যে একটি।

যা বাজারে লেনদেন সহজতর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সময়ের সাথে নোটটির ডিজাইন ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা জালিয়াতি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৫০০ টাকার নোটের ছবি?

নিচে ৫০০ টাকার নোটের ছবি দেওয়া হলোঃ৫০০ টাকার নোট

পাঁচশত টাকার নোট

৫০০ টাকার নোটের বিবর্তন ও ইতিহাস?

১. প্রথম সংস্করণ (১৯৯৭)

প্রথমবারের মতো ৫০০ টাকার নোট চালু হয় ১৯৯৭ সালে। এতে সাদা পটভূমিতে নকশা করা ছিল, এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা তুলনামূলক দুর্বল ছিল।

২. দ্বিতীয় সংস্করণ (২০০০-এর দশক)

২০০০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে নোটের ডিজাইনে পরিবর্তন আনা হয়। এতে সুরক্ষা সুতা, ওয়াটারমার্ক, মাইক্রোপ্রিন্টিং, বিশেষ রঙের ব্যবহার ইত্যাদি যুক্ত করা হয়।

আরও পড়ুনঃ ১০০ টাকার নোট কবে চালু হয়

৩. তৃতীয় সংস্করণ (২০০৮-২০১১)

২০০৮ সালের পর থেকে আরও আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন করা হয়। নতুন নোটে নিরাপত্তা ফিতা, উজ্জ্বল ও প্রতিসরণযোগ্য রঙ, এবং উন্নত জলছাপ (watermark) যুক্ত করা হয়।

৪. বর্তমান সংস্করণ (২০১৬-বর্তমান)

বর্তমানে প্রচলিত ৫০০ টাকার নোটটি ২০১৬ সালে চালু হয়। এতে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি এবং জাতীয় সংসদ ভবনের ছবি সংযোজন করা হয়েছে। উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংযোজন করা হয়েছে, যেমনঃ

  • রঙ পরিবর্তনকারী সুতা (Color shifting security thread)
  • উন্নত জলছাপ (Advanced watermark)
  • এম্বসড প্রিন্টিং (Raised printing) যাতে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা নোট চেনার সুবিধা পান

৫০০ টাকার নোটের প্রধান বৈশিষ্ট্য?

বাংলাদেশে ৫০০ টাকার নোট বর্তমানে প্রচলিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান ব্যাংকনোটগুলির মধ্যে একটি। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ

১. ডিজাইন এবং উপাদান

সামনের অংশে

  • শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি
  • বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক
  • নোটের পরিমাণ (৫০০)
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো

পেছনের অংশে

  • প্রাকৃতিক দৃশ্য বা ঐতিহাসিক স্থাপনার ছবি
  • শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতীক চিত্র

আরও পড়ুনঃ ১০ টাকার নোট কবে চালু হয়

২. নিরাপত্তা ব্যবস্থা

জলছাপ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি জলছাপে দৃশ্যমান।

নিরাপত্তা সুতা

রঙ পরিবর্তনকারী সুতা, যা আলোর নিচে সোনালি-সবুজ রং ধারণ করে।

উঁচু প্রিন্টিং (Raised Print)

এটি দৃষ্টিহীনদের জন্য সহজে শনাক্ত করা যায়।

UV প্রতিফলন

অতিবেগুনি (UV) আলোতে নোটের বিশেষ লেখা এবং ডিজাইন দৃশ্যমান হয়।

মাইক্রোপ্রিন্টিং

ছোট ছোট লেখা যা সাধারণ চোখে দেখা যায় না, কিন্তু বিশেষ যন্ত্রে দৃশ্যমান হয়।

৩. রঙ এবং আকার

রঙ

নোটটির রঙ প্রধানত হলুদ, কমলা এবং সবুজ।

মাপ

১৫৫ × ৭২ মিমি, এটি আকারে বড় এবং স্পষ্ট।

আরও পড়ুনঃ ৫ টাকার নোট কবে চালু হয়

৪. নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য

কিউআর কোড (QR Code)

ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য কোড সংযুক্ত করা হয়েছে।

রঙ পরিবর্তনকারী নিরাপত্তা কালি

আলোর পরিবর্তনের সাথে সাথে কালি রঙ বদলাতে থাকে, যা নোটটির অটেনটিসিটি যাচাই করতে সাহায্য করে।

ওল্ড স্টাইল ডিজাইন এবং নতুন স্টাইল

৫০০ টাকার নোটের পূর্ববর্তী সংস্করণ এবং বর্তমান সংস্করণের মধ্যে কিছু ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে।

৫. মুদ্রণ এবং মান

এটি উন্নত মানের কাগজে মুদ্রিত, যা দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই।

৫০০ টাকার নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য?

জাল নোট প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০০ টাকার নোটে বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংযোজন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোঃ

১. জলছাপ (Watermark)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখাবয়ব ও একটি সংখ্যায়িত “৫০০” চিহ্নিত জলছাপ দেখা যায়।

আরও পড়ুনঃ ১০ টাকার নোট কবে চালু হয়

২. নিরাপত্তা সুতা (Security Thread)

নোটের মাঝামাঝি অবস্থানে একটি উজ্জ্বল সুতা থাকে, যা আলোতে দেখলে সোনালী-সবুজ রঙ পরিবর্তন করে।

৩. মাইক্রোপ্রিন্ট (Microprinting)

কিছু লেখা এত ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না, তবে লেন্স দিয়ে স্পষ্টভাবে পড়া যায়।

৪. রঙ পরিবর্তনকারী কালি (Color Shifting Ink)

কিছু সংখ্যার রঙ আলোর ভিন্নতা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়, যা নকল করা কঠিন।

৫. স্পর্শে অনুভূত হয় এমন উঁচু প্রিন্টিং (Raised Print)

বিশেষ করে দৃষ্টিহীনদের জন্য নোটের নির্দিষ্ট অংশে উঁচু প্রিন্টিং রয়েছে।

৫০০ টাকার নোট ব্যবহার ও প্রভাব?

১. লেনদেন সহজ করা

বড় লেনদেনের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকার নোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বড় অঙ্কের অর্থ সহজে বহনযোগ্য করে তোলে।

২. কালোবাজারি ও জালিয়াতি প্রতিরোধ

বড় মূল্যমানের নোট কালো টাকার লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে, তাই বাংলাদেশ ব্যাংক নিরাপত্তা বাড়াতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে।

৩. সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতা

অধিকাংশ মানুষ বাজারে ৫০০ টাকার নোট ব্যবহার করে, বিশেষত ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এবং সাধারণ খুচরা বিক্রেতারা।

আরও পড়ুনঃ ১ টাকার নোট কবে চালু হয়

৫০০ টাকার নোট জালিয়াতি চেনার উপায়?

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে, আসল নোট চেনার জন্য নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য করতে হবেঃ

  • জলছাপ ও নিরাপত্তা সুতা খেয়াল করুন।
  • নোটের রঙ পরিবর্তনকারী অংশ আলোর নিচে পরিবর্তিত হয় কিনা দেখুন।
  • উঁচু প্রিন্টিং স্পর্শ করুন, এটি আসল নোটে অনুভূত হবে।
  • নোটটি আলোতে ধরলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও ৫০০ সংখ্যাটি স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।

শেষ কথা

বাংলাদেশে ৫০০ টাকার নোট ১৯৯৭ সালে চালু হওয়ার পর থেকে এটি দেশের আর্থিক লেনদেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক নোটটির ডিজাইন ও নিরাপত্তা উন্নত করেছে, যা নকল নোট প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সবাই ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button