ইসলাম

ভালোবাসা দিবস নিয়ে ইসলাম কি বলে

ভালোবাসা মানবজীবনের একটি স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতি। যা সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করে এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে। বিশ্বব্যাপী ১৪ ফেব্রুয়ারি “ভালোবাসা দিবস” বা “ভ্যালেন্টাইনস ডে” পালিত হয়, যা মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অংশ।

এই দিনে বিশেষত প্রেমিক-প্রেমিকারা একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে, উপহার দেয় এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তবে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসা কেবল একটি দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।ভালোবাসা দিবস নিয়ে ইসলাম কি বলেবরং এটি প্রতিদিনের বিষয়, যা শালীনতা ও নৈতিকতার সীমার মধ্যে থেকে পালন করতে হয়। তাই, ভালোবাসা দিবস পালন ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেটি নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইনস ডে) পালন করা উচিত কি না, তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। ইসলামী স্কলাররা সাধারণত এই দিবস সম্পর্কে নিম্নলিখিত দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেনঃ

ভালোবাসা দিবস নিয়ে ইসলাম কি বলে?

ভালোবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইন’স ডে) নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি বেশ স্পষ্ট। ইসলামী শরীয়াহ এবং ইসলামী পণ্ডিতদের মতে, ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছেঃ

১. ধর্মীয় উৎসের অভাব

ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি খ্রিস্টান এবং প্রাচীন রোমান সংস্কৃতি থেকে। এটি ইসলামী ঐতিহ্য বা শরীয়াহর অংশ নয়। ইসলামে কোনো বিশেষ দিনে ভালোবাসা প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো উৎসব বা রীতিনীতি নেই।

২. অনৈসলামিক রীতিনীতির অনুকরণ

ইসলামে অনৈসলামিক সংস্কৃতি বা ধর্মীয় রীতিনীতির অনুকরণ করা নিষেধ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের অনুকরণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।” (সুনান আবু দাউদ)।

ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা এই হাদীসের আলোকে অনৈসলামিক রীতিনীতির অনুকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরও পড়ুনঃ আজকের নামাজের সময়সূচী

৩. অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্ভাবনা

ভালোবাসা দিবসের সাথে অনেক সময় অনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমনঃ অবৈধ সম্পর্ক, অশ্লীলতা এবং ফ্রি মিক্সিং (পুরুষ ও মহিলার অবাধ মেলামেশা) জড়িত থাকে। ইসলামে এই ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং গুনাহের কাজ।

৪. ভালোবাসার ইসলামী ধারণা

ইসলামে ভালোবাসা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এটি শরীয়াহর সীমার মধ্যে থাকা আবশ্যক। ইসলামে স্বামী-স্ত্রী, পরিবার এবং বন্ধুদের মধ্যে ভালোবাসা প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিনের প্রয়োজন নেই। বরং প্রতিদিনই ভালোবাসা এবং স্নেহ প্রকাশের সুযোগ রয়েছে।

৫. ইসলামী পণ্ডিতদের ফতোয়া

বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামী পণ্ডিত এবং আলেমরা ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন। তারা এটিকে অনৈসলামিক এবং ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে বিবেচনা করেন।

৬. ইসলামে ভালোবাসার প্রকৃত শিক্ষা

ইসলামে ভালোবাসা এবং স্নেহ প্রকাশের জন্য শরীয়াহর নির্দেশনা রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার, সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং বন্ধুদের সাথে উত্তম আচরণ ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই ভালোবাসা প্রকাশের জন্য কোনো বিশেষ দিন বা রীতিনীতির প্রয়োজন নেই।

৭. হারাম ও অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকা

ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন অনেক সময় বিবাহ-পূর্ব সম্পর্ক, অবৈধ মেলামেশা, ও অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেনঃ “ব্যভিচারের নিকটেও যেও না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল ও মন্দ পথ।” (সূরা আল-ইসরা: ৩২)।

ইসলামে ভালোবাসার ধারণা?

ইসলামে ভালোবাসা খুব গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি একটি পবিত্র ও শালীন উপায়ে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। কুরআন ও হাদিসে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, পারিবারিক বন্ধন এবং মানবিক সম্পর্কের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, দয়াময় আল্লাহ তাদের জন্য মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন।” (সূরা মারইয়াম: ৯৬)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ “তোমরা পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধির জন্য সালাম প্রচার করো।” (মুসলিম, ৫৪)।

আরও পড়ুনঃ নামাজের জন্য কোরআনের ১৪টি ছোট সূরা বাংলা অনুবাদসহ

ভালোবাসা দিবস ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি?

ভ্যালেন্টাইনস ডে মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে এসেছে, যার উৎপত্তি খ্রিস্টান ধর্ম ও রোমান ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। ইসলামে অন্য ধর্মীয় উৎসব ও সংস্কৃতি অনুকরণ করা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

“যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।” (আবু দাউদ: ৪০৩১)

অনেক ইসলামিক স্কলার মনে করেন, ভালোবাসা প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট একটি দিন ঠিক করা ইসলামি সংস্কৃতির সাথে মানানসই নয়, কারণ ভালোবাসা প্রতিদিনই প্রকাশ করা উচিত, বিশেষ করে বৈধ সম্পর্কের (স্বামী-স্ত্রী) মধ্যে।

ইসলামে ভালোবাসা প্রকাশের বৈধ উপায়?

  • স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে পারেন যেকোনো দিন, শুধুমাত্র একটি দিনে সীমাবদ্ধ না রেখে।
  • হালাল ও বৈধ সম্পর্কের মধ্যে উপহার বিনিময় করা ইসলাম অনুমোদিত।
  • মাতা-পিতা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের প্রতি ভালোবাসা দেখানো উচিত।

শেষ কথা

ভালোবাসা প্রকাশ করা ইসলামে নিষিদ্ধ নয়, তবে ভ্যালেন্টাইনস ডে’র মতো পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব এড়িয়ে চলা উত্তম। ভালোবাসা সব সময় প্রকাশ করা যায়, তবে তা ইসলামের সীমার মধ্যে থেকে এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button