ইসলাম

সাওম কিভাবে পালন করতে হয়

সাওম বা রোজা ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে একটি, যা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও সক্ষম মুসলমানের উপর ফরজ। সাওম পালনের সঠিক পদ্ধতি ও নিয়মাবলী জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।সাওম কিভাবে পালন করতে হয়আজকের আর্টিকেলে সাওম কিভাবে পালন করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

সাওম কিভাবে পালন করতে হয়?

নিম্নে সাওম কিভাবে পালন করতে হয় তার বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

১. নিয়ত (ইচ্ছা)

সাওম পালনের জন্য প্রথমে নিয়ত করা প্রয়োজন। নিয়ত হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার দৃঢ় সংকল্প। নিয়ত মনে মনে করা যায়, তবে মুখে উচ্চারণ করাও সুন্নত। সাধারণত সাহরি খাওয়ার সময় নিয়ত করা হয়। নিয়তের উদাহরণঃ

আরবিতেঃ “نَوَيْتُ صَوْمَ غَدٍ عَنْ أَدَاءِ فَرْضِ شَهْرِ رَمَضَانَ هَذِهِ السَّنَةِ لِلهِ تَعَالَى”

বাংলায়ঃ আমি আগামীকাল রমজান মাসের ফরজ রোজা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য রাখার নিয়ত করলাম।

২. সাহরি খাওয়া

সাহরি হলো রোজা রাখার জন্য ভোররাতে খাবার গ্রহণ। সাহরি খাওয়া সুন্নত এবং এটি রোজার জন্য শক্তি যোগায়। সাহরির সময় শেষ হয় ফজরের আজান শুরু হওয়ার আগে। সাহরি খাওয়ার পর নিয়ত করা হয়।

আরও পড়ুনঃ সাওম শব্দের অর্থ কি

৩. ইফতার করা

সূর্যাস্তের পর রোজা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলে। ইফতারের সময় হলে খেজুর বা পানি দিয়ে রোজা ভাঙ্গা সুন্নত। ইফতারের সময় নিম্নের দোয়া পড়া যায়ঃ

আরবিতেঃ “ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ”

বাংলায়ঃ“পিপাসা দূরীভূত হয়েছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ সওয়াব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

৪. রোজার নিয়মাবলী

  • খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকা
  • সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য, পানীয় এবং ধূমপান থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা।
  • অশ্লীলতা ও গীবত থেকে বিরত থাকা
  • রোজার সময় অশ্লীল কথা, কাজ এবং গীবত (পরনিন্দা) থেকে দূরে থাকা।
  • ইবাদত ও কুরআন তিলাওয়াত
  • রোজার সময় বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া, জিকির ও কুরআন তিলাওয়াত করা।

৫. রোজা ভঙ্গকারী কাজসমূহ

কিছু কাজ রোজা ভঙ্গ করে, যেমনঃ

  • ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করা।
  • স্ত্রী সহবাস করা।
  • ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা।
  • হায়েজ বা নিফাস (মাসিক বা সন্তান প্রসবের পরের রক্ত) শুরু হওয়া।

৬. রোজা ভঙ্গের কাফফারা

যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করে, তবে তার উপর কাফফারা আদায় করা প্রয়োজন। কাফফারা হলোঃ

একটি রোজার পরিবর্তে ৬০ দিন ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখা। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে ৬০ জন মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো বা তার সমপরিমাণ অর্থ দান করা।

আরও পড়ুনঃ রমজানের রুটিন কেমন হওয়া উচিত

৭. কাযা রোজা

যদি কোনো কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় (যেমন অসুস্থতা, সফর, হায়েজ বা নিফাস), তবে পরে সেই রোজার কাযা রাখা প্রয়োজন। কাযা রোজা পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে রাখা যায়।

৮. তারাবিহের নামাজ

রমজান মাসে তারাবিহের নামাজ পড়া সুন্নত। এটি রাতের নামাজ হিসেবে পড়া হয় এবং সাধারণত ২০ রাকাত। তারাবিহের নামাজ জামাতে পড়া উত্তম।

৯. লাইলাতুল কদর

রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে লাইলাতুল কদর (কদরের রাত) অনুসন্ধান করা উত্তম। এই রাত ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম।

১০. ঈদুল ফিতর

রমজান মাস শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়। এই দিনে ঈদের নামাজ পড়া ও সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ সাওমের প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হয়

শেষ কথা

সাওম পালনের মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেন এবং আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম ও নৈতিক উন্নতি সাধন করেন। সাওমের সঠিক পদ্ধতি ও নিয়মাবলী জানা এবং তা অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাওমের মাধ্যমে মুসলমানরা আধ্যাত্মিক ও নৈতিক গুণাবলী অর্জন করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button