ইসলাম

ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিব

ফিতরা (যাকাতুল ফিতর) ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দান। যা রমজান মাসের শেষে, ঈদ-উল-ফিতরের দিন আগে গরীব, দুঃস্থ, অসহায় এবং অভাবীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিবএটি রোজাদারের উপর ওয়াজিব এবং এর মাধ্যমে মুসলিমরা তাদের রোজার ত্রুটিগুলো মুছে দেয় এবং গরীবদের ঈদের আনন্দে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। ফিতরা মূলত একটি মৌলিক ধর্মীয় দায়িত্ব, যা মুসলমানদের উপর শর্তসাপেক্ষে ওয়াজিব হয়।

তবে ফিতরা দেওয়ার কিছু নির্দিষ্ট শর্ত ও নিয়ম আছে এবং কেবলমাত্র সেই শর্তগুলো পূর্ণ হলে একজন মুসলিমের উপর ফিতরা ওয়াজিব হয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, কাদের উপর ফিতরা ওয়াজিব এবং কেন।

ফিতরা কাদের উপর ওয়াজিব?

১. ইসলামিক শর্ত

ফিতরা কেবলমাত্র মুসলমানদের উপর ওয়াজিব। এটি তাদের জন্য যারা ইসলামের মধ্যে বিশ্বাসী। অন্য ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির উপর এটি ওয়াজিব নয়।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এবং এর প্রতিটি দান-ধ্যান ও বিধান মুসলমানদের জীবনে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে এবং সহানুভূতির প্রতি লক্ষ্য রেখে দেয়া হয়।

২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া

ফিতরা কেবল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের উপর ওয়াজিব। অর্থাৎ, যারা শারীরিকভাবে পরিপক্ব এবং ইসলামী আইন অনুযায়ী বালিগ (বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক) হয়েছেন।

শিশুদের জন্য ফিতরা ওয়াজিব নয়, তবে তাদের অভিভাবক বা পিতা-মাতার দায়িত্ব থাকে তাদের পক্ষ থেকে ফিতরা প্রদান করা।

৩. স্বাধীন সম্পত্তির মালিক হওয়া (নেসাব)

ফিতরা দেওয়ার জন্য, একজন মুসলমানের উচিত তার মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণের পর অতিরিক্ত সম্পত্তি বা আয় রাখা। এই সম্পত্তির পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট স্তরের (নেসাব) বেশি হতে হবে।

নেসাব হল সেই পরিমাণ সম্পদ, যা তার পরিবারের খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান ও অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনের বাইরে থাকে। সাধারণত, নেসাবের পরিমাণ সোনার বা রূপার পরিমাণ হিসেবে নির্ধারিত হয়।

যেমনঃ যদি কোনো ব্যক্তির কাছে গরু, উট বা অন্যান্য মালিকানা দ্রব্য থাকে, এবং তার এই দ্রব্যগুলি নেসাবের পরিমাণে পৌঁছায়, তবে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব।

৪. রোজা রাখার শর্ত

ফিতরা সাধারণত রোজাদারদের উপর ওয়াজিব। যারা রমজান মাসে রোজা রেখেছেন, তাদের উপর ফিতরা দান করা হয়, কারণ এটি রোজার ত্রুটি ও অবহেলা মুছে ফেলার এক উপায় হিসেবে কাজ করে। রোজার মধ্যে কিছু ছোট ভুল বা গুনাহ হতে পারে, যেগুলি ফিতরা দ্বারা মুছে ফেলা হয়।

৫. দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

ঈদ উদযাপন

ফিতরা গরীবদের ঈদ-উল-ফিতরের আনন্দে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়, যাতে তারা ঈদের দিন নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে এবং পূর্ণ আনন্দ অনুভব করতে পারে।

সহানুভূতি ও সাহায্য

ফিতরা সমাজে সহানুভূতি ও সাহায্যের মানসিকতা বৃদ্ধি করে। এটি অভাবী ব্যক্তিদের প্রতি ইসলামের সহানুভূতি প্রকাশের এক উপায়।

ফিতরা দেওয়ার পরিমাণ?

ফিতরার পরিমাণ সাধারণত একজন মানুষের দৈনিক খাদ্য, অর্থাৎ ২.৫ কেজি বা তার সমপরিমাণ অন্য খাদ্যশস্য হিসেবে নির্ধারিত হয় (যেমন গম, যব, খেজুর, কিশমিশ)।

এটি ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্যের সংখ্যা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। এককভাবে, সাধারণত, একটি পরিবারের জন্য ফিতরার পরিমাণ বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য বা বাজার মূল্য অনুযায়ী হিসাব করা হয়।

আরও পড়ুনঃ ফিতরা দেওয়ার নিয়ম

ফিতরা দেওয়া নিয়ে কিছু বিধি?

বিতরণের সময়

ফিতরা ঈদের নামাজের আগে প্রদান করা উচিত, যাতে গরীবরা ঈদের দিন নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে সক্ষম হন।

প্রাপকদের সঠিক পরিচয়

ফিতরা দেওয়ার সময় নিশ্চিত করুন যে, আপনি যে ব্যক্তিকে ফিতরা দিচ্ছেন, তিনি প্রকৃত গরীব বা অসহায়। গরীবদের জন্য এই দান তাদের জীবনমান উন্নয়ন করতে সহায়ক হতে পারে।

শেষ কথা

ফিতরা কেবল রোজাদার, প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীনভাবে উপার্জনকারী এবং নেসাব পরিমাণ সম্পত্তির মালিক মুসলিমদের উপর ওয়াজিব। এটি ঈদ-উল-ফিতরের আনন্দকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে এবং সমাজে গরীবদের জন্য সহানুভূতি ও নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে। সবাইকে ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button