ইতিকাফের নিয়ম ও ফজিলত
ইসলামে ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যা আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং ইবাদতে মনোনিবেশ করার অন্যতম মাধ্যম। ইতিকাফ মূলত রমজানের শেষ দশ দিনে পালন করা হয়, তবে এটি বছরের অন্য সময়েও করা যায়।ইতিকাফ পালনের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াবি ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হওয়ার সুযোগ পায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিতভাবে ইতিকাফ করতেন এবং উম্মতকে এটি পালনের উৎসাহ দিতেন।
ইতিকাফ পালনের মাধ্যমে লাইলাতুল কদরের মতো মহান রাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। তাই ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম, যা মুসলমানদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ইতিকাফ কি?
ইতিকাফ অর্থ হলো নির্দিষ্ট একটি স্থানে একাগ্রচিত্তে অবস্থান করা। ইসলামী পরিভাষায়, ইতিকাফ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে মসজিদে নির্দিষ্ট সময় থাকা এবং ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকা। এটি মূলত রমজান মাসের শেষ দশ দিনে পালন করা হয়, তবে অন্যান্য সময়েও পালন করা যায়।
ইতিকাফের নিয়ম?
১. নিয়ত করা
ইতিকাফ শুরু করার আগে নিয়ত করতে হবে যে, এটি কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হচ্ছে।
২. মসজিদে অবস্থান করা
পুরুষদের জন্য মসজিদে থাকা বাধ্যতামূলক। মহিলারা ইতিকাফ করতে চাইলে ঘরের নির্দিষ্ট একটি স্থানে (যেখানে সাধারণত নামাজ পড়েন) অবস্থান করতে পারেন।
৩. সালাত ও কোরআন তিলাওয়াত
ইতিকাফকারীকে অধিক পরিমাণে নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকতে হবে।
৪. অপ্রয়োজনীয় কথা ও কাজ এড়িয়ে চলা
ইতিকাফের সময় অহেতুক কথা বলা, দুনিয়াবি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা বিনোদনের দিকে মনোযোগ দেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
৫. খাদ্য ও বিশ্রাম
ইতিকাফকারী মসজিদের ভেতরেই খাবার গ্রহণ করবেন এবং সেখানে ঘুমাবেন।
৬. প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া
ওযু, গোসল, প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না।
ইতিকাফের ফজিলত ও গুরুত্ব?
১. নবীজির (সা.) সুন্নত
হাদিস অনুযায়ী, রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন।
২. লাইলাতুল কদর লাভের সুযোগ
রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করলে লাইলাতুল কদরের বরকত পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৩. আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য
ইতিকাফ আত্মশুদ্ধির একটি অন্যতম মাধ্যম। এটি মনকে পরিশুদ্ধ করে এবং ইবাদতে মনোযোগী হতে সাহায্য করে।
৪. গুনাহ মাফ ও জান্নাতের সুসংবাদ
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইতিকাফ করে, সে বহু গুনাহ থেকে মুক্তি পায় এবং তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ইতিকাফের নিয়ত
ইতিকাফের ধরন?
১. ওয়াজিব ইতিকাফ
মানত করলে তা পালন করা আবশ্যক হয়ে যায়।
২. সুন্নত ইতিকাফ
রমজানের শেষ দশ দিনের ইতিকাফ।
৩. নফল ইতিকাফ
বছরের যে কোনো সময় কিছু সময়ের জন্য মসজিদে অবস্থান করাও নফল ইতিকাফ হিসেবে গণ্য হয়।
শেষ কথা
ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। এটি আত্মশুদ্ধি, গুনাহ মোচন এবং লাইলাতুল কদর পাওয়ার অন্যতম সুযোগ। তাই যার সামর্থ্য আছে, তার উচিত ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের চেষ্টা করা।