ইসলাম

রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া

ইসলামে রোজা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য এবং তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম। রমজান মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য রোজা রাখা ফরজ। রোজার প্রধান দুটি অংশ হলো নিয়ত করা এবং ইফতার করা।

নিয়ত হল রোজার শুদ্ধতার মূল ভিত্তি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক কাজের ফল নির্ভর করে নিয়তের ওপর।” তাই রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা আবশ্যক, যদিও এটি মুখে উচ্চারণ না করলেও চলে।রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়াঅন্যদিকে, ইফতার হল সারাদিন রোজা রাখার পর নির্ধারিত সময়ে আল্লাহর দেওয়া রিজিক গ্রহণের মাধ্যমে রোজা ভাঙা। ইফতারের সময় দোয়া করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ সময় দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইফতারের পর বিশেষ দোয়া পড়তেন, যা আমাদেরও অনুসরণ করা উচিত।

এইভাবে রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি আমাদের ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আত্মিক শক্তি বাড়ায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া?

রোজার নিয়ত আরবি, উচ্চারণ ও অর্থ?

আরবিঃ

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضًا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ

উচ্চারণঃ

নাওয়াইতু আন আসূমা গাদান মিন শাহরি রামাদ্বানাল মুবারাকি ফারদ্বাল লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আন্তাস্ সামীউল আলীম।”

অর্থঃ

“আমি নিয়ত করলাম যে, আগামীকাল রমজান মাসের রোজা রাখব তোমার (আল্লাহর) সন্তুষ্টির জন্য, অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।”

বিঃদ্রঃ

নিয়ত মূলত মনের ইচ্ছা, তাই আরবি পড়া বাধ্যতামূলক নয়। বাংলাতেও নিয়ত করা যেতে পারে।

রোজার নিয়ত সম্পর্কে সহিহ হাদিসের বক্তব্য?

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

“যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজার নিয়ত করবে না, তার রোজা নেই।” (সুনান আন-নাসাঈ: ২৩৩১, সুনান আবু দাউদ: ২৪৫৪, ইবনে মাজাহ: ১৭০০, সহিহ হাদিস)

হাদিসের ব্যাখ্যা

এই হাদিস অনুযায়ী, রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ত হলো ইচ্ছা বা সংকল্প, যা হৃদয় থেকে করা হয়। রোজার নিয়ত ফজরের আগে করতে হয়, অর্থাৎ রাতের মধ্যে বা সুবহে সাদিকের আগে নিয়ত করতে হয়। যদি কেউ ফজরের পর নিয়ত করে, তাহলে তার রোজা শুদ্ধ হবে না।

রোজার নিয়তের প্রকৃত অর্থ?

  • রোজার নিয়ত মূলত মনের ইচ্ছা
  • এটি মুখে উচ্চারণ করা আবশ্যক নয়।
  • নিয়ত বাংলা, আরবি বা যেকোনো ভাষায় করা যায়।
  • রাতে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেই নিয়ত হয়ে যায়।

সহজভাবে নিয়ত করার পদ্ধতি?

“আমি আগামীকাল রোজা রাখার ইচ্ছা করছি, হে আল্লাহ, তুমি কবুল করো।”

সুতরাং, আপনি যদি নির্দিষ্টভাবে কোনো হাদিস দ্বারা প্রমাণিত দোয়া খুঁজে থাকেন, তাহলে এ ধরনের আরবি নিয়ত কোনো নির্ভরযোগ্য হাদিসে পাওয়া যায় না।

আরও পড়ুনঃ রোজা কি এবং কেন

ইফতারের দোয়া আরবি, উচ্চারণ ও অর্থ?

আরবিঃ

بِسْمِ اللَّهِ، اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ

উচ্চারণঃ

বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু।” (মুআজ ইবনে জাহরা থেকে বর্ণিত, আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮)

অর্থঃ

“আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার দেওয়া রিজিক দ্বারাই ইফতার করছি।”

বিঃদ্রঃ

ইফতার করার সময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত, কারণ তিনি আমাদের রিজিক দান করেছেন এবং রোজা পালনের তৌফিক দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button