শবে কদর ২০২৫ কত তারিখে
বাংলাদেশে শবে কদর ২০২৫ সালে পালিত হবে ২৭ মার্চ,বৃহস্পতিবার (রমজানের ২৬ তারিখের রাত, অর্থাৎ ২৭ তারিখ দিবাগত রাত)।এটি ইসলামের এক মহিমান্বিত রাত, যা “হাজার মাসের চেয়েও উত্তম” হিসেবে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।
শবে কদরের তাৎপর্য?
শবে কদর (লাইলাতুল কদর) আরবি ভাষায় “শ্রেষ্ঠ রাত” অর্থ বহন করে। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, এই রাতে মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতির জন্য কুরআন নাজিল করেন এবং ফেরেশতারা পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে মুমিনদের জন্য রহমত, বরকত ও মাগফিরাত কামনা করেন।
কুরআনে আল্লাহ বলেনঃ “নিশ্চয়ই আমি এটি (কুরআন) কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো, কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
সে রাতে ফেরেশতারা এবং রূহ (জিবরাঈল আ.) প্রত্যেক বিষয়ে তাদের রবের অনুমতিক্রমে অবতরণ করেন। এটা শান্তিতে ভরা থাকে ফজরের উদয় পর্যন্ত।” (সূরা আল-কদর, আয়াত: ১-৫)।
শবে কদরের সম্ভাব্য তারিখ ও হিসাব?
ইসলামি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, শবে কদর নির্দিষ্ট কোনো তারিখে হয় না, তবে এটি রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে কোনো এক রাতে সংঘটিত হয়। অধিকাংশ ইসলামি পণ্ডিতদের মতে, এটি রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯তম রাতের মধ্যে কোনো একটিতে হয়।
হাদিস অনুযায়ী, রাসূল (সা.) বিশেষভাবে ২৭তম রাতকে শবে কদর হিসেবে বেশি গুরুত্ব দিতেন। তাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে সাধারণত রমজানের ২৬তম দিবাগত রাত শবে কদর হিসেবে পালন করা হয়।
শবে কদরের ফজিলত ও গুরুত্ব?
শবে কদরের রাত এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এটি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সম্পূর্ণ একটি সূরা (সূরা কদর) নাজিল করেছেন। এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেনঃ
“যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে শবে কদরের রাতে ইবাদত করবে, আল্লাহ তাআলা তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০১৪)
শবে কদরের কিছু বিশেষ ফজিলত?
১. হাজার মাসের ইবাদতের সমান সওয়াব
এই রাতে ইবাদত করলে ৮৩ বছরের ইবাদতের সওয়াব লাভ করা যায়।
২. ফেরেশতারা পৃথিবীতে আগমন করেন
আল্লাহর রহমত নিয়ে ফেরেশতারা দুনিয়ায় নেমে আসেন।
৩. গুনাহ মাফের সুযোগ
এই রাতে খালেস মনে তওবা করলে আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।
৪. নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়ার গুরুত্ব
এই রাতে যে ব্যক্তি বেশি বেশি নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়া করবে, সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে।
শবে কদরের নামাজ ও আমল?
এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত। রাসুল (সা.) ও সাহাবিদের সুন্নত অনুসারে শবে কদরে কিছু বিশেষ আমল করা হয়ঃ
১. নফল নামাজ
- ২, ৪, ৬, ৮ বা ১২ রাকাত নফল নামাজ পড়তে পারেন।
- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস বা অন্য কোনো সূরা পড়তে পারেন।
২. কুরআন তিলাওয়াত
এই রাতে কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
৩. বিশেষ দোয়া
নবী (সা.) শিখিয়েছেন, শবে কদরে এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়তে হবেঃ
اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني
উচ্চারণঃ
আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।
অর্থঃ
হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমাকে ভালোবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও।
৪. তাসবিহ ও জিকির
- সুবহানাল্লাহ (১০০ বার)
- আলহামদুলিল্লাহ (১০০ বার)
- আল্লাহু আকবার (১০০ বার)
- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (১০০ বার)
৫. দরুদ শরিফ পাঠ
রাসুল (সা.) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত বর্ষণ করবেন।”
৬. দান-সদকা
এই রাতে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করলে অসংখ্য সওয়াব পাওয়া যায়।
শবে কদরের রাতে কী করা উচিত?
- গভীর রাত পর্যন্ত ইবাদত করা
- কুরআন তিলাওয়াত করা
- পরিবারের জন্য দোয়া করা
- মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা
- নফল নামাজ পড়া
- গরিবদের দান করা
শবে কদরের রাতে যা করা উচিত নয়?
- গল্পগুজব ও সময় নষ্ট করা
- টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় ব্যয় করা
- অহেতুক ঘোরাঘুরি করা
- গানবাজনা ও বাজে কাজে লিপ্ত হওয়া
শেষ কথা
শবে কদর এমন একটি রাত, যা জীবন বদলে দিতে পারে। এটি গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ সুযোগ। তাই এই রাতকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো উচিত।
বেশি বেশি ইবাদত, তওবা ও দোয়া করলে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন এবং জান্নাতের পথে পরিচালিত করবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবে কদরের ফজিলত অর্জনের তৌফিক দান করুন, আমিন।