ইসলাম

লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত

লাইলাতুল কদর হলো ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও বরকতময় রাত, যা শবে কদর নামে পরিচিত। পবিত্র কুরআনের ভাষ্যমতে, এই রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম (সূরা আল-কদর, আয়াত ৩)।

এই রাতেই মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতির পথপ্রদর্শক আল-কুরআন নাজিল করেছেন। এ রাতের অন্যতম ইবাদত হলো নামাজ আদায় করা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃলাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান ও ইখলাসের সাথে নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০১৪)। লাইলাতুল কদরের নামাজ দুই রাকাআত করে আদায় করা যায়।

এতে বিশেষ কোনো নির্দিষ্ট দোয়া নেই, তবে কুরআন তেলাওয়াত, জিকির ও দোয়া করা উত্তম। নামাজ শুরুর আগে নিয়ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ইবাদতের মূল ভিত্তি। নিয়ত মনে স্থির করাই যথেষ্ট, তবে অনেকেই মুখে উচ্চারণ করে নেন।

লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত?

আরবি নিয়তঃ

“نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلَاةِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ نَافِلَةً، مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ، اللَّهُ أَكْبَرُ”।

বাংলা উচ্চারণঃ

“নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকআতাই সালাতি লাইলাতিল কদরি নাফিলাতান, মুতাওয়াজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরিফাহ, আল্লাহু আকবার।”

ইংরেজি নিয়তঃ

“Nawaitu an usalliya lillāhi ta‘ālā rak‘atay ṣalāti laylatil-qadri nāfilatan, mutawajjihan ilā jihatil-ka‘bati ash-sharīfah, Allāhu Akbar.”

বাংলা নিয়তঃ

“আমি ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম”, আল্লাহু আকবার।”

লাইলাতুলকদরের দোয়া?

লাইলাতুল কদরের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের একটি বিশেষ দোয়া শিখিয়েছেন, যা এই রাতে বেশি বেশি পড়তে বলা হয়েছে।

আরবি উচ্চারণঃ

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

বাংলা উচ্চারণঃ

“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।”

বাংলা অর্থঃ

“হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসো, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও।” (তিরমিজি, মিশকাত)

উপদেশঃ

এই দোয়াটি শবে কদরের জন্য সর্বোত্তম দোয়া হিসেবে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তাই এই রাতে বেশি বেশি করে দোয়াটি পড়া উচিত। এছাড়া নিজের ও সমগ্র উম্মাহর জন্য দোয়া করা, ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটানো, তাওবা-ইস্তিগফার করা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা উচিত।

লাইলাতুলকদরের ফজিলত?

শবে কদর বা লাইলাতুল কদর ইসলাম ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় রাত। পবিত্র কুরআনে এই রাতকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়

এটি এমন একটি রাত, যখন আল্লাহর অসীম রহমত, মাগফিরাত (ক্ষমা) এবং নাজাত (মুক্তি) লাভের সুযোগ রয়েছে। এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে বহু বর্ণনা পাওয়া যায়। নিচে শবে কদরের বিশেষ ফজিলত দেওয়া হলোঃ

১. হাজার মাসের চেয়েও উত্তম

শবে কদরে করা ইবাদত ১,০০০ মাসের (প্রায় ৮৩ বছর ৪ মাস) ইবাদতের সমান সওয়াব বহন করে। (সূরা আল-কদর, আয়াত ৩)

২. গুনাহ মাফের সুযোগ

যে ব্যক্তি এই রাতে ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করবে, আল্লাহ তার অতীতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০১৪)

৩. ফেরেশতাদের আগমন

এ রাতে অসংখ্য ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হয়। (সূরা আল-কদর, আয়াত ৪-৫)

৪. কুরআন অবতরণ

এই বরকতময় রাতেই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পবিত্র আল-কুরআন নাজিল হয়েছে, যা ইসলামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। (সূরা আল-কদর, আয়াত ১)

এই পবিত্র রাতে আমরা সবাই আল্লাহর দরবারে বিনম্রচিত্তে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হই এবং তাঁর রহমত ও মাগফিরাত কামনা করি। এ রাতের অফুরন্ত বরকত ও রহমত আমাদের জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে পারে।

তাই আসুন, আমরা একাগ্রচিত্তে নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবে কদরের বরকত অর্জনের তাওফিক দান করুন এবং আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিন। আমিন।

শেষ কথা

লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই রাতের ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত এবং মুক্তি লাভ করা সম্ভব। তাই মুসলিম উম্মাহর উচিত এ রাতকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা এবং বেশি বেশি নামাজ, দোয়া ও ইবাদতে মশগুল থাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button