ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত
ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্য এক আনন্দের দিন। যা দীর্ঘ এক মাস রমজানের সিয়াম সাধনার পর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে উপহার। এ দিনে ফজরের নামাজের পর থেকে তাকবির বলা,ঈদের নামাজ আদায় করা, খুতবা শোনা এবং আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে খুশি ভাগাভাগি করা ইসলামের অন্যতম সুন্নত ও বিধান। ঈদের নামাজ শুদ্ধভাবে আদায়ের জন্য নিয়ত (ইচ্ছা বা সংকল্প) করা আবশ্যক।
নিয়ত ছাড়া কোনো ইবাদত শুদ্ধ হয় না, কারণ “নিয়তের উপরেই সকল কাজ নির্ভরশীল” (সহিহ বোখারি)। তাই ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য সঠিক নিয়ত করা অপরিহার্য।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত?
আরবি উচ্চারণঃ
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلَاةِ عِيدِ الْفِطْرِ، مَعَ سِتِّ تَكْبِيرَاتٍ، وَاجِبًا لِلَّهِ تَعَالَى، اقْتَدَيْتُ بِهَذَا الْإِمَامِ، مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ، اَللَّهُ أَكْبَرُ۔
বাংলা উচ্চারণঃ
“নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতা সালাতি ঈদিল ফিতর”, মায়া ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমাম, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।’
বাংলা অর্থঃ
“আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি, আল্লাহু আকবার।
ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়ম?
ঈদের নামাজ দুই রাকাত, অতিরিক্ত ছয় তাকবিরসহ আদায় করা হয়। এবং নামাজ শেষে খুতবা দেওয়া হয়, যা শোনা মুস্তাহাব।
ঈদের নামাজের প্রথম রাকাতের নিয়ম?
তাকবিরে তাহরিমা
ইমামের সঙ্গে “আল্লাহু আকবার” বলে উভয় হাত উঠিয়ে বেঁধে নিতে হবে।
ছানা পড়া
“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়াতাআলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।”
অতিরিক্ত তিন তাকবির
- এক তাকবির থেকে অন্য তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরতি দিতে হবে।
- প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দিতে হবে।
- তৃতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হবে।
- আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ে সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা মিলাতে হবে।
- নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করতে হবে।
দ্বিতীয় রাকাতের নিয়ম?
১. বিসমিল্লাহ পড়ে সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা মিলাতে হবে।
২. সুরা মিলানোর পর অতিরিক্ত তিন তাকবির
- প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দিতে হবে।
- তৃতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হবে।
৩. রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া।
৪. সেজদা আদায় করা।
৫. বৈঠকে বসা
তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।
নামাজের সালাম ফেরানোর পর তাকবির পড়াঃ
আরবি উচ্চারণঃ
اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَروَلِلهِ الْحَمْد
ইংরেজি উচ্চারণঃ
Allāhu Akbar, Allāhu Akbar, Lā ilāha illallāhu wa Allāhu Akbar, Allāhu Akbar wa lillāhil-hamd.
বাংলা উচ্চারণঃ
“আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।”
ঈদের নামাজ ও খুতবা সংক্রান্ত বিধান?
১. ঈদের নামাজের পর খুতবা
ঈদের নামাজ আদায়ের পর ইমাম দুটি খুতবা প্রদান করবেন এবং মুসল্লিরা তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবেন। যদিও অনেকে ঈদের নামাজের পর খুতবা না দেওয়ার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখিয়েছেন
এবং খুতবা না দিলেও নামাজ সহিহ হবে বলে মত দিয়েছেন। তবে খুতবা দেওয়া সুন্নত এবং এতে ঈদের গুরুত্ব ও করণীয় সম্পর্কে মুসল্লিরা উপকৃত হন।
২. ঈদের নামাজের তাকবির
(ক) অতিরিক্ত তাকবির
- ঈদের নামাজে অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া হয়। অন্যান্য মাজহাবসহ অধিকাংশ আলেমের মতে,
- প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমাসহ ৭ তাকবির,
- দ্বিতীয় রাকাতে ৫ অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া উত্তম।
তবে কেউ যদি ৬ বা ১১ তাকবির দেন, তাহলেও নামাজ বিশুদ্ধ থাকবে এবং এতে কোনো অসুবিধা হবে না।
(খ) ঈদের তাকবির পড়ার গুরুত্ব
ঈদের চাঁদ দেখার পর থেকেই তাকবির পড়া মুস্তাহাব। আল্লাহ তাআলা কোরআনে এর নির্দেশ দিয়েছেনঃ
> وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
“আর তোমরা আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা করো, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো।” (সুরা বাকারা: ১৮৫)
তাকবির হলোঃ
اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر وَلِلهِ الْحَمْد
উচ্চারণ
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।”
৩. ঈদের নামাজের পর করণীয়
১. পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময়
ঈদের দিনে মুসলমানদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করা মুস্তাহাব। এটি ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধিতে সহায়ক।
২. আনন্দ ও উদযাপন
ঈদ আনন্দ প্রকাশের দিন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও মুসলিম ভাইদের সঙ্গে খুশি ভাগ করে নেওয়া সুন্নত।
৩. সম্পর্ক পুনরুদ্ধার ও মিল-মিশ করা
ঈদ পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক জোড়া লাগানোর সুযোগ। যারা পরস্পর বিরোধে জড়িত, তাদের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের জন্য এটি উত্তম সময়।
৪. ভালো খাবার ও পোশাক
পরিবারের সদস্যদের জন্য ভালো খাবার, নতুন বা পরিচ্ছন্ন পোশাক এবং বৈধ বিনোদনের ব্যবস্থা করা জায়েজ। ইসলাম আনন্দ প্রকাশে কোনো বাধা দেয়নি।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
> قُلۡ بِفَضۡلِ ٱللَّهِ وَبِرَحۡمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلۡيَفۡرَحُواْ هُوَ خَيۡرٞ مِّمَّا يَجۡمَعُونَ
“বল, আল্লাহর অনুগ্রহ এবং রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এবং এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম।” (সুরা ইউনুস: ৫৮)।
ঈদের নামাজের বিশেষত্ব?
- আজান ইকামত নেই।
- ছয় অতিরিক্ত তাকবির আছে।
- নামাজ শেষে ইমামের খুতবা শোনা মুস্তাহাব।
শেষ কথা
ঈদের নামাজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এতে তাকবির, খুতবা ও শুভেচ্ছা বিনিময় ইসলামের সৌন্দর্য প্রকাশ করে। ঈদ কেবল আনন্দের উৎসব নয়। এটি আত্মশুদ্ধি, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করার অনন্য সুযোগ।