ঈদুল ফিতর এর ইতিহাস
ঈদ মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি মহিমান্বিত ও আনন্দময় অনুষ্ঠান। ‘ঈদ’ শব্দের অর্থ খুশি, আনন্দ ও উৎসব, তবে প্রকৃত অর্থ হলো ‘পুনরাগমন’ বা ‘বারবার ফিরে আসা’। যেহেতু ঈদ প্রতিবছর মুসলমানদের জীবনে ফিরে আসে, তাই একে ঈদ বলা হয়।
ইসলামে দুটি ঈদ পালিত হয় একটি ঈদুল ফিতর ও অপরটি ঈদুল আজহা। এই দুটি দিন মুসলমানদের জন্য বিশেষভাবে আনন্দদায়ক, যেখানে তারা মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনের মাধ্যমে নিজেদের আত্মশুদ্ধি অর্জন করে।ঈদের দিন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে, যা সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের প্রতীক। এ দুটি ঈদ শুধু উৎসব নয়।
বরং আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। মুসলিম সমাজে এই দিনগুলো সর্বোচ্চ আনন্দের দিন হিসেবে উদযাপিত হয়, যেখানে সবাই পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
ঈদুল ফিতর এর ইতিহাস?
মহানবী (সা.) এর মক্কায় অবস্থানের তেরো বছরের মধ্যে রোজা ও ঈদের বিধান চালু ছিল না। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে আল্লাহর নির্দেশে তিনি মদিনায় হিজরত করেন। সে সময় মদিনায় নওরোজ ও মেহেরজান নামে দুটি উৎসব প্রচলিত ছিল।
স্থানীয় জনগণ নববর্ষ উপলক্ষে নওরোজ এবং বসন্তকাল উপলক্ষে মেহেরজান উদযাপন করত। এসব অনুষ্ঠানে নানাবিধ আনন্দ-উৎসব, খেলাধুলা ও বিনোদনের আয়োজন থাকলেও এতে অশ্লীলতা, মদপান ও অনৈতিক আচরণ মিশ্রিত ছিল।
মহানবী (সা.) এর দাওয়াতে বহু মদিনাবাসী ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের ফলে তাদের জন্য নওরোজ ও মেহেরজানের মতো জাহিলি যুগের উৎসবগুলো নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
এরপর তারা নবী (সা.) এর কাছে এমন একটি বৈধ উৎসবের প্রত্যাশা প্রকাশ করেন, যেখানে আনন্দ-উৎসব করা সম্ভব হবে। এভাবেই দুটি বছর কেটে যায় এবং ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে আল্লাহ তাআলা রমজানের রোজাকে ফরজ করে দেন।
একই সময়, জাহিলি যুগের অনৈতিক উৎসবগুলোর পরিবর্তে ইসলাম দুটি নতুন ও পবিত্র উৎসব প্রদান করে একটি ঈদুল ফিতর ও অপরটি ঈদুল আজহা। (নাসায়ি)
এই দুই ঈদ উৎসব মুসলমানদের মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে। ঈদের দিনে তারা সকল বিভেদ ও মতানৈক্য ভুলে গিয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করে এবং মিলেমিশে আনন্দ উদযাপন করে।
মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদিকে এই দুই বরকতময় উৎসব দান করেছেন, যা পূর্ববর্তী কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি। ঈদুল ফিতর সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেনঃ
রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছেঃ একটি ইফতারের (ঈদুল ফিতর) সময়ের আনন্দ এবং অপরটি হলো (পরকালে) আল্লাহর সান্নিধ্যে উপস্থিত হওয়ার আনন্দ।”