হারাম রোজা কি | হারাম রোজা কত প্রকার
ইসলামে কিছু নির্দিষ্ট দিনে রোজা রাখা হারাম বা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব দিনে রোজা পালন করা শরিয়তের দৃষ্টিতে গুনাহের কারণ হতে পারে।হারাম রোজা থেকে বিরত থাকা ইসলামের বিধান মেনে চলার এবং সুন্নতের অনুসরণের অংশ।
হারাম রোজা কি?
হারাম রোজা হলো সেই রোজা, যা ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব দিনে রোজা রাখা ইসলামী বিধান অনুযায়ী নিষিদ্ধ এবং তা পালন করলে গুনাহ হবে।
হারাম রোজা কত প্রকার?
ইসলামে কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনে রোজা রাখা সম্পূর্ণ হারাম। এসব দিনের রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে কারণ তা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও বিধানের পরিপন্থী।
১. দুই ঈদের দিনে রোজা রাখা হারাম
ঈদুল ফিতর (১ শাওয়াল) এবং ঈদুল আজহা (১০ জিলহজ) এর দিনে রোজা রাখা সম্পূর্ণ হারাম।
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ।” (বুখারি, মুসলিম)
কারণ ঈদের দিনগুলো আনন্দ, খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করার জন্য নির্ধারিত।
২. কুরবানির পরবর্তী তিন দিনে (তাশরীক-এর দিন) রোজা রাখা হারাম
১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ (ঈদুল আজহার পরের তিন দিন) রোজা রাখা হারাম।
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “তাশরীক এর দিনগুলো হলো খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহকে স্মরণ করার দিন।” (মুসলিম)
এই দিনগুলোতে হজযাত্রী ও মুসলিম উম্মাহর জন্য কুরবানির গোশত ভোগ করার বিধান রয়েছে, তাই রোজা নিষিদ্ধ।
আরো পড়ুনঃ রোজা কি এবং কেন
৩. সন্দেহপূর্ণ দিনে (৩০ শাবান) রোজা রাখা হারাম
৩০ শাবান (যে দিন নিশ্চিত নয় যে রমজান শুরু হয়েছে কি না) রোজা রাখা হারাম, যদি চাঁদ দেখা না যায়।
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ দিনে (৩০ শাবান) রোজা রাখে, সে আবু কাসিম (সা.)-এর সুন্নতের বিরোধিতা করল।” (তিরমিজি)
কারণ এটি ইসলামের সুস্পষ্ট নিয়মের বিপরীত।
৪. স্ত্রীর জন্য স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা রাখা
স্ত্রী যদি স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা রাখে, তাহলে তা হারাম হতে পারে, যদি এতে স্বামী কোনো কষ্ট বা অসুবিধায় পড়ে।
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “যখন কোনো স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা রাখে, আর স্বামী তাকে প্রয়োজন অনুভব করে, তখন সে যেন রোজা না রাখে।” (বুখারি, মুসলিম)
তবে ফরয রোজার ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতির প্রয়োজন নেই।
৫. হায়েজ ও নিফাস অবস্থায় মহিলাদের রোজা রাখা হারাম
মাসিক (হায়েজ) বা প্রসব-পরবর্তী রক্তস্রাব (নিফাস) চলাকালে মহিলাদের জন্য রোজা রাখা হারাম।
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “মাসিক ও নিফাস অবস্থায় নারীরা রোজা পালন করবে না। পরে কাযা করবে।” (বুখারি, মুসলিম)
এই অবস্থায় রোজা রাখলে তা শুদ্ধ হবে না এবং পরবর্তীতে কাজা করতে হবে।
৬. গুরুতর অসুস্থ বা মারাত্মক দুর্বল ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা হারাম
যদি রোজা রাখা কারও জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তবে তার জন্য রোজা রাখা হারাম।
কুরআনে বলা হয়েছেঃ “আর তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে, সে অন্য দিনে রোজা পূরণ করুক।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)
তাই মারাত্মক অসুস্থ হলে রোজা না রেখে পরে কাজা করা উচিত।
আরও পড়ুনঃ রোজা সম্পর্কে ছোট হাদিস
শেষ কথা
হারাম রোজা ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ, কারণ এটি ইসলামের মৌলিক বিধান ও সুন্নতের বিপরীত। আল্লাহ ও রাসূল (সা.) যেসব দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন, সেগুলো এড়িয়ে চলাই উত্তম। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী রোজা পালন করলে তবেই সওয়াব পাওয়া যাবে এবং তা পরিপূর্ণ হবে।