ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
ঈদ মুসলমানদের জন্য আনন্দ ও উৎসবের দিন। এই দিনে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য মুসলমানরা বিশেষ নামাজ আদায় করে, যা ঈদের নামাজ নামে পরিচিত। ঈদের নামাজ বছরে দুইবার আদায় করা হয় ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন।এটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (নিশ্চিত সুন্নত) এবং বিশেষ নিয়মে আদায় করা হয়। ঈদের নামাজ সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে একত্রিত করে, ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে
এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলে। তাই ঈদের নামাজের নিয়ম জানা ও তা যথাযথভাবে আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম?
ঈদের নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (নিশ্চিত সুন্নত) এবং এটি দুই রাকাত বিশিষ্ট। ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়ম অন্যান্য নামাজের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। নিচে ঈদের নামাজের সুন্নত ও নিয়মাবলি তুলে ধরা হলোঃ
ঈদের নামাজের প্রস্তুতি?
১. গোসল করা
ঈদের দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসল করা সুন্নত।
২. সুন্দর ও পরিষ্কার পোশাক পরা
সম্ভব হলে নতুন পোশাক পরা অথবা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা উত্তম।
৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা
সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত।
৪. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া
সম্ভব হলে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় হাঁটাপথে যাওয়া উত্তম।
৫. তাকবির বলা
ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ) পাঠ করা সুন্নত।
ঈদের নামাজের নিয়ম?
১. নিয়ত করা
ঈদুল ফিতরের জন্য
نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ
আরবি উচ্চারণঃ
“নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি ‘আল্লাহু আকবার’।”
বাংলা অর্থঃ
আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি, ‘আল্লাহু আকবার’।
ঈদুল আজহার জন্য
আরবি নিয়তঃ
نويت ان اصلي لله تعالي ركعتي صلاة العيد الاضحى مع ستة تكبيرات واجب الله تعالى اقتديت بهذا الامام متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر
বাংলা উচ্চারণঃ
“নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা আলা রাকয়াতাই ছালাতি ঈদিল আযহা মাআ ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা আলা ইক্বতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলা অর্থঃ
ঈদের দুই রাকাআত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি”, আল্লাহু আকবার।
২. তাকবিরে তাহরিমা
ইমামের সঙ্গে “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজে প্রবেশ করা।
৩. সানা পড়া
“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা…” পড়া।
৪. তিনটি অতিরিক্ত তাকবির
ইমাম তিনবার তাকবির বলবেন, মুনাজাতের মতো হাত উঠিয়ে তাকবির বলতে হবে এবং তৃতীয় তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দিতে হবে।
৫. কিরাত পাঠ
ইমাম ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বেন এবং অন্য সব নামাজের মতো রুকু ও সেজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবেন।
৬. দ্বিতীয় রাকাতে তাকবির
দ্বিতীয় রাকাতে উঠে ইমাম ফাতিহা ও একটি সূরা পড়বেন, এরপর রুকুর আগে আবার তিনবার তাকবির দিতে হবে এবং চতুর্থবার রুকুতে চলে যেতে হবে।
৭. সালাম ফিরানো
যথারীতি সেজদা শেষ করে তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
ঈদের নামাজের পর খুতবা?
ঈদের নামাজের পর ইমাম খুতবা পাঠ করবেন, যা শোনা ওয়াজিব। ঈদুল ফিতরের খুতবায় ফিতরার গুরুত্ব এবং ঈদুল আজহার খুতবায় কুরবানির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
সংক্ষেপে ঈদের নামাজের নিয়ম?
- নিয়ত করা
- তাকবিরে তাহরিমা
- সানা পড়া
- তিনবার অতিরিক্ত তাকবির
- ফাতিহা ও সূরা পড়ে রুকু ও সেজদা করা
- দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা পড়ে রুকুর আগে তিনবার অতিরিক্ত তাকবির পড়া।
- সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা
- খুতবা শোনা
এই নিয়ম অনুসরণ করে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়।